ঠিকমতো ঘুম হয় না? ব্যায়াম করুন, দীর্ঘায়ু হওয়ার মন্ত্র
কম ঘুম বা অতিরিক্ত ঘুম মানুষের জীবনকাল কমায়। তবে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, শারিরীক কসরত কারও কম বিশ্রাম নেওয়ার কিছু নেতিবাচক প্রভাব কমাতে পারে।
ভালো ঘুম সবার কাছে প্রশান্তির। দীর্ঘকাল বাঁচার জন্যও তা অপরিহার্য। তবে দেখা যাচ্ছে, মানুষ বর্তমানে কম ঘুমাচ্ছে। চারজনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক বিশ্বাস করেন, তারা ভালভাবে বিশ্রাম নেন না। সেজন্যই আমাদের ঘুমের অভ্যাস ও তার গুণমানের দিকে মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাপ্তবয়স্ক ও বয়স্কদের জন্য ঘুমের সর্বোত্তম সময়কাল সাত থেকে নয় ঘণ্টা। শিশুদের জন্য এটা আরও বেশি। গবেষকরা জানান, খুব কম বা খুব বেশি ঘুম সব ধরনের রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
হয়তো ভেবে অবাক হতে পারেন, ঘুমের সঙ্গে ব্যায়ামের কী সম্পর্ক। সম্পর্ক অনেক। ঘুম ও ব্যায়াম একাধিক শারীরবৃত্তীয় এবং মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে একে অপরকে প্রভাবিত করে। পর্যাপ্ত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস আয়ু বাড়ানোর মূল চাবিকাঠি।
গবেষণার মাধ্যমে এখনো চূড়ান্তভাবে বলা না গেলেও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ অস্বাস্থ্যকর ঘুমের সাথে সম্পর্কিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে। এক গবেষণায় ব্যায়াম ও মৃত্যু ঝুঁকির সাথে ঘুমের সময়কাল সম্পর্কিত সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা গেছে। সম্প্রতি ইউরোপিয়ান জার্নাল অভ প্রিভেনটিভ কার্ডিওলোজিতে ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় গড়ে ৬২ বছর বয়সী এক লাখ নারী-পুরুষ অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের পুরো সপ্তাহের শারিরীক কার্যক্রম পরিমাপ করা হয়। পরের সাত বছর তাদের কয়জন মারা গেছেন, তা যাচাই করা হয়। সেই সময়কালে কার্ডিওভাসকুলার রোগে এক হাজার জন এবং এক হাজার ৮০০ জন মারা যান ক্যান্সারে।
ঘুমের সময়কালকে গবেষকরা তিন ভাগে ভাগ করেন—ছয় ঘণ্টার কম ঘুম; ছয় থেকে আট ঘণ্টা এবং তারচেয়ে বেশি সময় ঘুম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট স্বাভাবিক শারিরীক কার্যক্রম (হাঁটাহাঁটি, নড়াচড়া) বা ৭৫ মিনিট ব্যায়ামের মত শারিরীক কসরত বা দুটোর সমন্বয় হলো আদর্শ।
ব্যায়ামের ফলাফলের সঙ্গে ব্যক্তির ঘুমের সময়কাল এবং মৃত্যুর ঝুঁকি পরিমাপে ইংরেজী বর্ণ 'ইউ' আকৃতির প্যাটার্ন অনুসরণ করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, যারা অল্প ঘুমান (ছয় ঘণ্টার কম) বা অনেক বেশি (আট ঘণ্টার বেশি) ঘুমান, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো ব্যক্তির চেয়ে বেশি। এটি কার্ডিওভাসকুলার মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। তবে ঘুমের সময়কাল ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত নয়।
এই গবেষণাটি উৎসাহব্যঞ্জক এবং সেইসব মানুষের জন্য আশাপ্রদ যারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসরণ করে।
এই নির্দেশিকাগুলো মেনে চললে তা খুব কম বা খুব বেশি ঘুমের সাথে সম্পর্কিত মৃত্যুর অতিরিক্ত ঝুঁকি হ্রাস করে। এইভাবে শারীরিক কার্যকলাপ মৃত্যুর সাথে অপর্যাপ্ত ঘুমের সময়কালের ক্ষতিকারক সম্পর্ককে প্রশমিত করতে পারে। গবেষণাটি এই উপসংহারে উপনীত হয় যে, যারা স্বাভাবিক মাত্রায় ঘুমায় এবং যারা প্রচুর ব্যায়াম করে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে কম ছিল।
এই গবেষণা থেকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় শিক্ষা হলো, যেসব মানুষ খুব বেশি বা কম ঘুমায় তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্যায়ামের সুপারিশ অনুসরণ করে মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে পারে।
গবেষকরা বলেন, কম ঘুম স্নায়ুতন্ত্রের হাইপারঅ্যারোসাল, ইনসুলিন প্রতিরোধ, এনডোথেলিয়ালের কার্যক্ষমতা কমানোর সাথে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, ব্যায়াম কার্ডিওরেসপিরেটরি ফিটনেসকে শক্তিশালী করে, প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়াকে বাধা দেয় এবং গ্লুকোজের রূপান্তরকে উন্নত করে। গবেষণাটি চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করে যে, অপর্যাপ্ত ঘুমের সময়কালের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধির ঝুঁকি শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে বৃদ্ধি পায়।