বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৬ কংগ্রেস সদস্যের চিঠি
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে চিঠি দিয়েছেন ৬ মার্কিন কংগ্রেস সদস্য।
চিঠিতে তারা বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে অভিযোগ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, '২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির চলমান অবনতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করতেই আমাদের এই চিঠি'।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ৬ কংগ্রেস সদস্য হলেন- উইলিয়াম আর কিটিং, জেমস পি ম্যাকগভার্ন, বারবারা লি, জিম কস্টা, ডিনা টাইটাস ও জেমি রাসকিন। তারা সবাই দেশটির ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য।
উইলিয়াম আর কিটিং মঙ্গলবার (১৪ জুন) এক টুইটে চিঠিটির ছবি শেয়ার করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এই চিঠির দেওয়ার কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বাইডেন প্রশাসনকে এর বিপরীতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান মার্কিন কংগ্রেসের অপর ৬ সদস্য।
এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ৬ সংসদ সদস্যও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধানকে চিঠি দেন।
৮ জুন লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও অন্যান্য সংস্থাকে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিতে ধারাবাহিকভাবে আহ্বান জানাতে অনুরোধ করছি; এরমধ্যে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পুলিশের আধাসামরিক ইউনিট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নও (র্যাব) রয়েছে।'
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'মার্কিন কর্মকর্তাদের স্পষ্ট ও বারবার দেওয়া বিবৃতি এবং উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকারকে তার মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা মেনে চলা নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে। এটি আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইতোমধ্যে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার ও সহিংসতা হয়েছে, যা নির্বাচনের ফলকে কলঙ্কিত করতে পারে এবং সামাজিক সংঘাতকে আরও গভীর করে তুলতে পারে।'
চিঠিতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় র্যাব এবং এর ৭ জন বর্তমান ও সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কার্যকর ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে তারা স্বাগত জানিয়ে লিখেছেন, 'দুর্ভাগ্যবশত, এসব কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও বাংলাদেশে নিপীড়ন বন্ধ হয়নি।'
'বাংলাদেশি মানবাধিকার সংস্থা অধিকার, তাদের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০২২-এ ৩১টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ২১টি বলপূর্বক গুম, ৬৮টি জেলের ভিতরে মৃত্যু এবং সাংবাদিকদের ওপর র্যাব-গোয়েন্দা শাখাসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা সংঘটিত ১৮৩টি হামলার বিষয় নথিভুক্ত করেছেন। এরপরেও বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অস্বীকার করে চলেছে এবং জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত ও পদোন্নতি প্রদান করার পাশাপাশি এ সব অভিযোগকে দেশটির সরকার "দেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার" বলে অভিহিত করে বিষয়টির গুরুত্বকে খাটো করছে,' উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
'এছাড়া, ২০২১ সালের ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বাংলাদেশি সমাজে অনেককে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে প্রত্যক্ষ করা এবং নথিভুক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকার সুশীল সমাজ, মানবাধিকার রক্ষাকারী সংগঠন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার এবং তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার যারা হয়রানির সম্মুখীন হয়েছে তাদের জোরপূর্বক সাদা কাগজে বা পূর্ব লিখিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে; যাতে বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় যে, তাদের আত্মীয় নিখোঁজ হয়েছেন, তাদেরকে জোর করে তুলে নেওয়া হয়নি।'
তারা চিঠিতে আরও উল্লেখ করেছেন, 'আমরা বুঝতে পারছি যে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে সরকারের প্রশংসা করছি। একই সময়ে, ২০২৩ সালের গণতন্ত্রের শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্তটি একটি স্পষ্ট সংকেত ছিল যে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে দেশটির গণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকার চ্যালেঞ্জগুলোকে অনুধাবন করে।'
৬ কংগ্রেস সদস্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলোর উত্তর আশা করেছেন।
প্রশ্নগুলো হলো-
- র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সসহ বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্টগুলো স্টেট ডিপার্টমেন্ট কীভাবে নিরীক্ষণ করে?
- এই সংস্থাগুলো দ্বারা সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তি হ্রাস করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অগ্রগতি বা এর অভাব মূল্যায়ন করার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট কোন সূচক ব্যবহার করছে? নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কি এই একই সূচকগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়?
- ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সুশীল সমাজ সংগঠন, মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের সরকারের রোষানল থেকে রক্ষা করার জন্য কী ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে?
- র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং এর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে সমন্বয় করতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের উত্সাহিত করার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট কী কী প্রচেষ্টা করছে?
- গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য জড়িত বলে বিশ্বাস করা যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা সীমাবদ্ধ করার নতুন নীতির পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র সরকার কি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচন, অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে?
- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশসহ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের শর্ত বিদ্যমান কিনা, তা মূল্যায়ন করতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট কোন সূচক ব্যবহার করছে?