স্মার্ট হাটে ১৫০ কোটি টাকা ক্যাশলেস লেনদেনের প্রত্যাশা
২০২২ সালের ঈদুল আযহা উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ছয়টি স্মার্ট হাটে প্রায় ৩৩ কোটি ৪০ লাখ ৫০ টাকা ক্যাশলেস লেনদেন হয়েছে। চলতি বছর ঢাকায় আরো দুটি বাড়ানোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) দুটি পশুর হাটসহ মোট ১০টি স্মার্ট হাটে ব্যাংক, কার্ড, এমএফএস সার্ভিসের মাধ্যমে লেনদেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ২৬টি জেলার খামারীদের সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বছর দেড়শ কোটি টাকা ক্যাশলেস লেনদেনের প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (২০ জুন) চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউরি সেনাকল্যাণ কনভেনশন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। নগরীর সাগরিকা ও নূর নগর গরুর বাজারে ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে লেনদেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটিএম বুথ, এজেন্ট ব্যাংকিং, এমএফএস সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে এসব হাটে।
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা। সংবাদ সম্মেলনে ব্যবস্থাপনার সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ জিয়াউল হক।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২২ সালের হিসেবে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল। এর আর্থিক মূল্য ২২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে অনলাইন ও ডিজিটাল মাধ্যমে সাড়ে ৩ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল। এর মূল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে ২৭ শতাংশ লেনদেন ক্যাশলেস করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। গত বছর ২৫০ জন খামারী ও বেপারীকে স্মার্ট সেবার আওতায় আনা হয়েছিল। এ বছর প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি আনা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় ২৬টি জেলার খামারী ও বেপারীর ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে। তাদের ক্যাশলেস সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, স্মার্ট হাটে ডিজিটাল বুথ থাকবে। এতে এটিএম মেশিন, মোবাইলে আর্থিক লেনদেন সেবা, ডিজিটাল ব্যাংকিং ইত্যাদির সুবিধা উপভোগ করবেন কোরবানির বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা। বিক্রেতারা বুথে এসেও একাউন্ট খুলতে পারবে। নগদ অর্থ লেনদেনের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি লেনদেনকারীদের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা রেকর্ড সৃষ্টি হবে। সৃষ্ট রেকর্ড পশু বিক্রেতাগণকে ভবিষ্যতে সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তিসহ বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা গ্রহণের জন্য সহায়তা করবে। এছাড়া গরুর বাজারের জাল টাকার মাধ্যমে প্রতারণাও কমবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, "স্মার্ট হাট সেবার কারণে কোরবানির বিকিকিনিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধচক্রের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। আর বেচাকেনাও নিরাপদ আর ঝামেলাহীন হয়ে উঠবে। এবারে দুটি হাটের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে সবগুলো কোরবানির হাটে ক্যাশলেস লেনদেনের সুবিধা সৃষ্টি করবে চসিক। প্রধানমন্ত্রী যে ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রামকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করার কাজ চলছে। এধরনের ডিজিটিাল সেবার উদ্যোগ চট্টগ্রামের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সুফল ঘরে তুলতে সহায়তা করবে পাশাপাশি অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির হারও বৃদ্ধি করবে।"
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা বলেন, "চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে স্মার্ট রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আমাদের পেমেন্ট সিস্টেমকে স্মার্ট করতে হবে। দেশের আর্থিক কার্যক্রমকে ডিজিটাল করার মাধ্যমে আমরা 'ক্যাশলেস বাংলাদেশ' গড়তে লড়ছি। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশব্যাপী বিস্তৃত স্থায়ী ও সাপ্তাহিক পশুর হাটের লেনদেন ক্যাশলেস করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।"
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আশরাফুল আলম খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মোতাসেম বিল্লাহ, জুলিয়া চৌধুরী, যুগ্ম পরিচালক রেজাউল করিম, সরকার মো. আমির খসরু, সালাহউদ্দিন মাহমুদ, উপ-পরিচালক হাসনাত আহসান, চসিকের এস্টেট অফিসার রেজাউল করিম, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ইভিপি আবদুল নাসের, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আমানুল্লাহসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের 'ক্যাশলেস বাংলাদেশ' উদ্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় তৃণমূল পর্যায়ে পশু বিক্রেতাগণকে আর্থিক পরিসেবার আওতায় আনতে এবং সাধারণ ক্রেতাগণের সর্বপর্যায়ে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কুরবানির পশুর হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন বিশেষত বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে লেনদেন প্রসারের এই কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
এসব হাটে ১০টি ব্যাংক, ৪টি এমএফএস প্রোভাইডার এবং ৩টি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিমের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন পরিচালনা করা হবে। এগুলো হলো- এবি ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি, আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম এমেক্স, মাস্টারকার্ড ও ভিসা এবং এমএফএস প্রোভাইডার বিকাশ, নগদ, উপায় ও এমক্যাশ।