মে মাসে রাজস্ব আদায়ে বড় উল্লম্ফন
আগের মাস এপ্রিলে রাজস্ব আদায় নেগেটিভ হওয়ার পর হঠাৎ করেই মে মাসে রাজস্ব আদায়ে বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আলোচ্য মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৯ শতাংশ, যা এ বছরে এক মাসে সর্বোচ্চ।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানিতে বিধিনিষেধ কমানো, বকেয়া আদায়, কোর্টে পেন্ডিং মামলার রায় এনবিআরের পক্ষে আসা এবং সেখান থেকে রাজস্ব আদায়, তদারকি বৃদ্ধি প্রভৃতি রাজস্ব আদায় বাড়ার অন্যতম কারণ।
অবশ্য অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চাপ থাকায় এনবিআর শেষ সময়ে এসে 'এনহেন্সড এফোর্ট' এর কারণে হয়তো রাজস্ব আদায়ে এ উল্লম্ফন দেখা গেছে।
তা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছর বিশাল রাজস্বের ঘাটতি থাকবে বলে মনে করেন তারা।
"আইএমএফের সাথে কমিটমেন্টের কারণে এনবিআরের উপর রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চাপ রয়েছে। এজন্য ইয়ার ক্লোজিং এ এসে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা আদায় বাড়াতে এনহেন্সড এফোর্ট দিয়েছে। এ কারণে হয়তো আদায় বেড়েছে", সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য টিবিএসকে এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, "যেসব প্রতিষ্ঠানের সেপ্টেম্বরে ট্যাক্স পরিশোধ করার কথা, তার একটি অংশ হয়তো অ্যাডভান্স কালেকশন করেছে।"
গত জানুয়ারিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদের সময় কিছু শর্তও যুক্ত করে দেয়। যার মধ্যে অন্যতম হলো ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও (জিডিপিতে রাজস্বের অবদান) বাড়ানো। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও ছিলো ৭.৮%, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ০.৫% বাড়িয়ে ৮.৩% করার শর্ত রয়েছে।
ঋণের পরবর্তী আগাম কিস্তি অক্টোবরের পরে দেওয়ার আগে তারা বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সংস্কারের লক্ষ্যে দেওয়া শর্ত কতটুকু পূরণ হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করবে।
ফলে এনবিআরের উপর রাজস্ব বৃদ্ধির চাপ রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন বাজেটে বিভিন্ন খাতে করহার বাড়ানো হয়েছে।
আমদানি শুল্ক আদায়ের ৯০ শতাংশই আদায় হয় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ থেকে। রিজার্ভ সংকটের প্রেক্ষিতে সরকার গত অর্থবছরের শুরু থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করলেও গত মার্চ থেকে তা কিছুটা সহজ হওয়ায় এ কাস্টমস হাউজে রাজস্ব আদায় বাড়ছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "যেসব খাত থেকে তুলনামূলক বেশি রাজস্ব আদায় হয়, তা আমদানিতে রেস্ট্রিকশন ইজি করে দেওয়ায় আমদানি বাড়ছে। এজন্য আমদানিতে রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে। এছাড়া বকেয়া আদায়, আদালতে পেন্ডিং থাকা মামলার রায় পক্ষে আসা, তদারকি বাড়ানোও রাজস্ব আদায় বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।"
তিনি বলেন, "মে পর্যন্ত ১১ মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হয়েছে, আশা করছি জুন নাগাদ তা ৬ শতাংশে উন্নীত হবে।"
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মে মাসে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আদায় করেছে ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮-৬৫ শতাংশ বেশি। এই সময়ে আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে আদায়ে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা প্রায় ৫০ শতাংশ। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আদায় বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ আর ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বা ভ্যাট আদায় বেড়েছে ১৫ শতাংশের সামান্য বেশি।
এছাড়া মে পর্যন্ত ১১ মাসে ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ ছাড়ালেও আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায়ে ঘাটতি প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা।