কর্মজীবী মায়েদের সহায়তায় জেলা পর্যায়ে ৬০টি ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন করবে সরকার
কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের জন্য এবার জেলা পর্যায়ে ৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এর মাধ্যমে কর্মজীবী মায়েদের, গার্মেন্টস ও কারখানায় নারী শ্রমিকদের ছোট শিশুদের (৬ মাস থেকে ৬ বছর) নিরাপদ দিবাকালীন সেবা দেওয়া হবে। প্রতিটি ডে-কেয়ারে ৫০ থেকে ৮০টি শিশু রাখা হবে। ডে কেয়ারে থাকবে শিশুর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ। প্রতিটি শিশুর জন্য ডে কেয়ার সেন্টারে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। এখানে যেসব শিশু থাকবে তাদের ইপিআই এর ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা হবে।
এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প সম্প্রতি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৭ কোটি টাকা।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং জাতীয় মহিলা সংস্থা আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
দেশে বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ১১৯টি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র রয়েছে। শিশু দিবাযত্ন কর্মসূচির আওতায় রাজস্ব খাতভুক্ত মোট ৪৩টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালিত হয়ে থাকে। এছাড়াও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এর অধীনে বাস্তবায়িত ২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে ২০টি ডে কেয়ার সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে কর্মরত নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্মজীবী মায়েদের ডে-কেয়ার সুবিধা না দিলে নারী অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারে না। ডে কেয়ার সেন্টারের স্থাপনের মাধ্যমে কর্মরত নারীদের কর্মস্থলে মনোযোগ নিশ্চিত হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততার হার বৃদ্ধি পাবে, যা নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী ডে-কেয়ার কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে ভাড়া বাড়িতে। তবে সরকারি/বেসরকারী দপ্তরে স্থান জায়গা পাওয়া গেলে সেখানে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে। প্রতি বছর এ প্রকল্পের আওতায় ৩০০০ শিশুকে দিবাকালীন সেবা দেয়া হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, "ডে কেয়ার করার উদ্যোগটি একটি ভালো উদ্যোগ। ডে কেয়ারের অভাবে অনেক চাকরিজীবী নারী কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, অনেক মা ছোট সন্তানকে নিরাপদে রাখার জায়গার অভাবে কাজ শুরু করতে পারেনা। যা অর্থনীতির জন্য ভালো না। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ডে কেয়ার সহায়ক। কর্মজীবী, শ্রমজীবী মায়েদের সহায়ক সাপোর্ট হলো ডে কেয়ার।"
''সরকার যেন দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, বাজেটের টাকা যেন সঠিকভাবে খরচ হয় এবং সেন্টারগুলো যেন কার্যক্ষম থাকে, সেটা মনিটর করতে হবে'', বলেন তিনি।
এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন, সাভার, ধামরাই ,মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, গাজীপুরের কালিগঞ্জে মোট ১৬টি ডে-কেয়ার নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, কর্ণফুলি উপজেলা, কুমিল্লা, বরিশালের পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনা, খুলনা বিভাগের খুলনা সিটি করপোরেশন, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মেহেরপুর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ জেলায় একটি করে ডে কেয়ার স্থাপন করা হবে।
এছাড়াও রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, সিলেট বিভাগের সিলেট সিটি করপোরেশন, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রংপুর বিভাগের রংপুর সিটি করপোরেশন, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলা সদরেও ডে কেয়ার স্থাপনের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প মেয়াদ শেষে রাজস্ব বাজেটের আওতায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নিজস্ব জনবল দ্বারা পরিচালিত হবে। জনবল বিধি মোতাবেক মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে পদ সৃজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে বিধিমোতাবেক আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগ প্রদান করে পদ সৃজন না হওয়া পর্যন্ত রাজস্ব বাজেটের আওতায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
ডে কেয়ার সেন্টারে ডে কেয়ার অফিসার, শিক্ষিকা, স্বাস্থ্য শিক্ষিকা, আয়া, কুক, সহকারী কুক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গার্ড ও অফিস সহায়ক থাকবে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদা পারভীন বলেন, "ঢাকাসহ সারাদেশে ৬০টা ডে কেয়ার তৈরির প্রকল্পটি আমাদের পাইপলাইনে আছে। সরকারি প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে, এরপর ফান্ড আসলে কাজ শুরু করবো। ডে কেয়ারে বাচ্চাদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে বাচ্চাদের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট, পুষ্টিকর খাবার দেয়া হয়। ডে কেয়ার স্থাপন করা হলে কর্মজীবী মায়েদের কাজ চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে। আমরা চাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ডে কেয়ার স্থাপনে এগিয়ে আসুক, আমরা সেন্টারের অনুমোদন দিবো।"
কর্মজীবী নারী যাতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেদের ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য সরকার ১৯৯১ সালে নারীর নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে কাজ করার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করে । নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মায়েদের জন্য এ প্রকল্পের আওতায় দুই পর্যায়ে মোট ১২টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন হয়েছে যা সারা দেশব্যাপী পরিচালিত হয়েছে। তার মধ্যে ৫টি ঢাকা শহরে এবং ৫টি বিভাগীয় শহরে। নারীদের চাহিদার কারণে ১৯৯৭ সালে 'কর্মজীবী মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মায়েদের শিশুদের জন্য শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র' শিরোনামে একটি প্রকল্প পরিচালিত হয়।