একসঙ্গে মাস্টার্সের ভর্তি পরীক্ষায় মা-ছেলে
ছেলে আলিফের জন্মের সময় মা আইরিন পড়তেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রথম বর্ষে। ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা আর সন্তান জন্মের প্রস্তুতি চলছিল তার সমানতালেই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুইদিন পরই প্রথম সন্তানের মুখ দেখেন আইরিন। ২৭ বছর পর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছেলের গ্র্যাজুয়েশন শেষে এবার মা-ছেলে একসঙ্গে বসেছেন মাস্টার্সের ভর্তি পরীক্ষায়। ইতিমধ্যেই অংশ নিয়েছেন ভাইভায়, আশা করছেন একসঙ্গেই আবার পড়াশোনা শুরু করবেন মা-ছেলে।
মায়ের এই সাহসী পথচলার গল্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করেছেন ছেলে মো. মুকসেতুল ইসলাম আলিফ। সেই পোস্টে তাদের শুভকামনা জানাচ্ছেন অসংখ্য ফেসবুক ব্যবহারকারী। যেখানে সন্তানের কথা ভেবে দেশের অসংখ্য মায়েদের প্রতিনিয়ত নিজের ক্যারিয়ারের স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হচ্ছে, সেখানে সন্তান আর মায়ের একসঙ্গে স্বপ্ন পূরণের এই পথচলা দেখে অণুপ্রেরিত হচ্ছেন আরো অনেকেই।
মা-ছেলের এই জুটির গল্প জানতে তাদের সঙ্গে কথা হয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯৪-৯৫ সেশনের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী ছিলেন জুলিয়া আইরিন। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হতেই বিয়ে হয়েছিল তার। ঢাবিতে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কিছুদিন পরই গর্ভধারণ করেন তিনি। আইরিনের মাত্র বিশ বছর বয়স তখন।
তার ভাষ্যে, 'ওইটুকু বয়সে যৌথ পরিবারে সংসার, বাচ্চা সামলে পড়ালেখা করাটা যথারীতি কঠিন ছিল আমার জন্য। তবু একবারের জন্যও থেমে থাকিনি।'
ছেলের দেখভাল করতে করতেই নিজের গ্র্যাজুয়েশন আর মাস্টার্স শেষ করেন। ছেলেকে নিয়ে যেতেন নিজের ক্লাসেও। এর মাঝে জন্ম হয় আরেক সন্তানের। আইনজীবী শ্বশুরের সহায়তায় এলএলবি কোর্সও সম্পন্ন করেন তিনি। ১৭ বছর যাবত কাজ করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে।
বাচ্চাসহ পড়াশোনা আর ক্যারিয়ারের এই যাত্রায় পরিবার, আর বন্ধুদের সাপোর্ট সবচেয়ে বেশি সাহস জুগিয়েছে বলে জানান আইরিন। 'আমি সবসময় ভেবেছি যেভাবেই হোক আমাকে পারতেই হবে। এখন যখন ওই বয়সের জার্নিটার কথা ভাবি নিজেরই খুব অবাক লাগে, সেই সাথে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার সাহসও পাই,' বলেন তিনি।
আলিফ জানান, অনেক দিন যাবতই মায়ের স্বপ্ন ছিল আরেকটা মাস্টার্স করার। ঢাবির শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেশনাল মাস্টার্সের বিজ্ঞপ্তি দেখে তাই একসঙ্গেই আবেদন করেন দুজন।
আইনজীবী হিসেবে তার মায়ের পেশায় এখানকার কোর্সগুলোও বেশ কাজে লাগবে মনে করেন তিনি। আলিফ বলেন, 'মায়ের পরীক্ষাও বেশ ভালো হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের ভেতর অফিশিয়াল রেজাল্ট দেবে। আশা করছি দুজন একসাথেই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব।'