চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সর্বোচ্চ আমদানি পণ্যের তালিকায় সিমেন্ট ক্লিংকার
ডলার সংকটের কারণে বিলাসজাতীয় পণ্যের আমদানি কমলেও দেশের অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত পণ্য আমদানি আগের তুলনায় বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে শুল্কায়ন হওয়া সর্বোচ্চ আমদানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে সিমেন্ট ক্লিংকার।
পণ্যটি গত কয়েক বছর ধরে আমদানিতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিমাণের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ আমদানি হওয়া অন্যান্য পণ্যের তালিকায় শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে ব্রোকেন অর ক্রাশড স্টোন, স্ল্যাগ স্যান্ড, হাই স্পিড ডিজেল অয়েল এবং কোল (কয়লা)।
সিমেন্ট খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের চলমান সংকটে বিলাসজাতীয় পণ্য আমদানি কমে গেলেও মোটামুটি স্বাভাবিক ছিলো অবকাঠামো উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর আমদানি। সেজন্য সিমেন্ট, পাথর সহ জ্বালানি পণ্য আমদানি প্রায় স্বাভাবিক ছিল।
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, "ডলার সংকটে সিমেন্ট ক্লিংকার চাহিদার তুলনায় কম আমদানি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ক্লিংকার আমদানি আরো বেশি হতো। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাস্তবায়ন হচ্ছে মেগা প্রকল্প। তাই প্রতিবছরই দেশে সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।"
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭৭১ হাজার মেট্রিক টন সিমেন্ট ক্লিংকার , ১২৩৩ হাজার মেট্রিক টন ব্রোকেন অর ক্রাশড স্টোন, ৫১২ হাজার মেট্রিক টন স্ল্যাগ স্যান্ড, ৪৫৫ হাজার মেট্রিক টন হাই স্পিড ডিজেল অয়েল, ৪২২ হাজার মেট্রিক টন কোল (কয়লা) আমদানি হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে এমন ৫টি পণ্য হচ্ছে হাই স্পিড ডিজেল অয়েল ৬,৭৬২ কোটি, আদার ফুয়েল অয়েল ৪,১৮৪ কোটি, সিমেন্ট ক্লিংকার ২,৭৪০ কোটি, ব্রোকেন অর ক্রাশড স্টোন ১,৩১২ কোটি এবং পেট্রোলিয়াম অয়েল ১১৩২ কোটি টাকা।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা পণ্যের শুল্কায়ন হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মাধ্যমে। এছাড়া মোংলা বন্দর, পায়রা বন্দর, ঢাকা বিমানবন্দর সহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়েও পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্য খালাস হয় বন্দর সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউসের কিংবা শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে।
চট্টগ্রাম বন্দরে পরিমাণের দিক দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে বেশি আমদানি হওয়া ৫টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট ক্লিংকার ১,৬৯৩ হাজার মেট্রিক টন, ভ্যাট রেজিস্ট্রার্ড ম্যানুফেকচারড র' মেটেরিয়াল ১,০০৩ হাজার মেট্রিক টন, ব্রোকেন অর ক্রাশড স্টোন ৬৯২ হাজার মেট্রিক টন, স্ক্র্যাপ ৪৯৮ হাজার মেট্রিক টন, আদার ফুয়েল অয়েল ৪৫৬ হাজার মেট্রিক টন।
২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয় এমন ৫টি পণ্য আদার ফুয়েল অয়েল, ফার্নেস অয়েল থেকে ৫৭২৮ কোটি টাকা, হাই স্পিড ডিজেল অয়েল থেকে ৩৮১৪ কোটি টাকা, সিমেন্ট ক্লিংকার থেকে ২৩৫৩ কোটি টাকা, হট রোলড থেকে ১২৪২ কোটি টাকা, পাম অয়েল থেকে ১২০৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয় চট্টগ্রাম কাস্টমসের।
২০২০-২১ অর্থবছরে বেশি আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট ক্লিংকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানি হয় ১৮৮১ হাজার মেট্রিক টন। এছাড়া ব্রোকেন অর ক্রাশড স্টোন ৯৩৭ হাজার মেট্রিক টন, ম্যানুফেকচারড র' মেটেরিয়াল ৫৮১ হাজার মেট্রিক টন, ন্যাচারাল গ্যাস ৫৭০ হাজার মেট্রিক টন, স্ল্যাপ স্যান্ড ৫৫৫ হাজার মেট্রিক টন।
২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বেশি হয় এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে হাই স্পিড ডিজেল অয়েল ৩৮৮৯ কোটি টাকা, আদার ফুয়েল অয়েল ফার্নেস অয়েল ২৭০৩ কোটি টাকা, ন্যাচারাল গ্যাস ২৪০০ কোটি টাকা, সিমেন্ট ক্লিংকার ২২৮২ কোটি টাকা, পাম অয়েল ১০৬৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানি হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, মোংলা কাস্টম হাউস, ঢাকা কাস্টম হাউস এবং ঢাকা বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সিমেন্ট ক্লিংকার খালাস হয় ১১৪৪ কোটি ৮৬ লাখ মেট্রিক টন। এসব সিমেন্টে ক্লিংকারের দাম ৭৪৮১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এসব শুল্ক স্টেশন দিয়ে ২০২২ সালে আমদানি হয় ১৩৪০৭ কোটি টাকা মূল্যের ২৩২৮ কোটি ১৭ লাখ মেট্রিক টন সিমেন্ট ক্লিংকার। এছাড়া ২০২১ সালে ১১,৩৭৩ কোটি টাকা মূল্যের ২,৪২১ কোটি ৭৩ লাখ মেট্রিক টন, ২০২০ সালে ৯০৫৫ কোটি ১০ লাখ টাকা মূল্যের ২১৪০ কোটি ৩৯ লাখ মেট্রিক টন সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানি হয়।