বন্যায় ভাসছে সাতকানিয়া, কবর দেওয়ার জন্যও শুকনো মাটি নেই
স্মরণকালের ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মানুষ। যতদূর চোখ যায় শুধুই পানি আর পানি। বাড়ির আঙ্গিনা, ফসলের মাঠ, কবরস্থান সব জায়গা ডুবে আছে পানিতে। মৃত মানুষকে কবরস্থ করার সুযোগও নেই। বন্যায় ডুবে যাওয়া ভূমি জেগে ওঠার অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা।
মঙ্গলবার রাতে বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান নুরুল ইসলাম। কিন্তু একটুকরো শুকনো জায়গা না পেয়ে তিনদিন ধরে তার মরদেহ ফ্রিজার অ্যাম্বুলেন্সে রেখে অপেক্ষায় আছেন তার স্বজনরা। এটি সাতকানিয়া সদরের ৭ নম্বর ভোয়লিয়া পাড়ার ঘটনা।
নুরুল ইসলামের স্বজন শাহেদ হোসেন হিরা জানান, মঙ্গলবার নুরুল ইসলামের মৃত্যু হয় নিজ বাড়িতে। কিন্তু রাতে পানি বেড়ে যাওয়ায় তার মরদেহ রাখা হয় পাশের বাড়িতে। কিন্তু পরদিন বুধবার সেখানেও পানি চলে আসলে শহর থেকে ফ্রিজার গাড়ি ভাড়া করে আনা হয়। সড়ক ডুবে যাওয়ায় সেটিও রাখতে হয় এক কিলোমিটার দূরের ডলু ব্রিজের উপর। পরে নুরুল ইসলামের স্বজনেরা কোমরপানি মাড়িয়ে মরদেহ ফ্রিজারে রাখেন। এখন আত্মীয়স্বজনরা মরদেহ দাফনের জন্য বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির অপেক্ষায় আছেন।
শাহেদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মঙ্গলবার রাতে আমাদের আত্মীয় নুরুল ইসলামের মৃত্যু হয়। কিন্তু তার নিজ বাড়িসহ আশেপাশের সব বাড়িতেই পানি। এমনকি উঠোন বা কবরস্থানেও এক টুকরো শুকনো জমি নেই লাশ রাখার জন্য। একারণে গত তিনদিনেও তার জানাজা বা দাফন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা পানি কমার অপেক্ষায় আছি।'
সাংবাদিক মিজানুল ইসলাম বলেন, 'একখণ্ড শুকনো মাটির বড়ই অভাব সাতকানিয়ায়। চারদিকে পানি আর পানি। মৃত মানুষকে কবরস্থ করার সুযোগও নেই। ডুবে যাওয়া মাটি জেগে ওঠার অপেক্ষা আছেন স্বজনরা।'
শুধু ভোয়লিয়া পাড়া নয়, দিন যত যাচ্ছে সাতকানিয়া জুড়ে এমন অজস্র ঘটনা সামনে আসছে। বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে এবং নৌকা ডুবে এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, এসব মরদেহ দাফনে তাদের স্বজনরা দুর্ভোগ পোহান।
১০ নম্বর কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ওসমান আলী বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতির মাঝেই আমার এলাকায় এক সনাতন ধর্মালম্বীর মৃত্যু হয়। কিন্তু লাশ দাহ করার জন্য শ্মশানে নেওয়ার পরিস্থিতি ছিলো না। পরে নৌকার ব্যবস্থায় লাশটি সৎকারের জন্য পাঠানো হয়। এছাড়া বেশ কয়েকজন প্রসূতি মা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের।'
ছয়দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং বান্দরবানের বন্যা পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। সাঙ্গু ও মাতামুহুরি নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপরে রয়েছে। এরমধ্যে সাতকানিয়ার ১৬টি ইউনিয়নের সব গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলোতে এই মুহুর্তে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আজ সকাল থেকে যান চলাচল শুরু হলেও বান্দরবানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। গত চার দিন ধরে বিদ্যুৎহীন রয়েছে সাতকানিয়া সহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিন উপজেলা। সুপেয় পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে বন্যাকবলিত এলাকায়।