চ্যাটবট স্রেফ ‘টেপ রেকর্ডার’, এর অতিরিক্ত গুণগান করা হচ্ছে: শীর্ষস্থানীয় পদার্থবিদ
চ্যাটজিপিটি এবং এ ধরনের জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক উন্মাদনাকে 'মিডিয়া সেনসেশনালিজম' বলে মন্তব্য করেছেন খ্যাতনামা পদার্থবিদ মিচিও কাকু। এই জাপানি-আমেরিকান পদার্থবিদ মনে করেন, গণমাধ্যমে এই প্রযুক্তিটিকে অতিরঞ্জিত করে দেখানোর ফলে কোয়ান্টার কম্পিউটিং এর আসন্ন অগ্রগতি এর আড়ালে চাপা পড়ে যেতে পারে।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর ফরিদ জাকারিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিচিও কাকু কন্টেন্ট তৈরিতে চ্যাটবটের দক্ষতার কথা স্বীকার করলেও, কল্পিত বা বানোয়াট কাহিনি থেকে সত্যের এবং ভুল তথ্য থেকে সঠিক ডেটার পার্থক্য করার ক্ষেত্রে এগুলোর সীমাবদ্ধতার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি চ্যাটবটকে স্রেফ এক ধরনের 'টেপ রেকর্ডার' বলে অভিহিত করেছেন, যেটির অতিরিক্ত গুণগান করা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, চ্যাটবটগুলো শুধু ইন্টারনেটে বিদ্যমান তথ্য রি-অ্যারেঞ্জ করে বা পুনরায় সাজায়।
রবিবার জাকারিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাকু বলেন, "এটি মানুষের তৈরি ওয়েব থেকে টুকরো টুকরো তথ্য নিয়ে জোড়া দিয়ে সেগুলো এমনভাবে উপস্থিত করে যে মনে হবে চ্যাটবট নিজেই তৈরি করেছে। আর তখন মানুষ চেঁচিয়ে ওঠে, 'ওহ ঈশ্বর! এটা তো একদম মানুষের মতো কাজ, এটা মানুষের মতোই… অথচ চ্যাটবট শুধু ইন্টারনেটে থাকা তথ্যগুলোকে রিঅ্যারেঞ্জ করে।"
কিছুদিন আগে গুগলের সাবেক এআই গবেষক মেরেডিথ হুইটেকারও কাকুর মতোই একইভাবে চ্যাটবটের সমালোচনা করেছিলেন।
প্রতিবাদস্বরূপ কোম্পানি ছেড়ে দেওয়া এই গবেষক গত মে মাসে এনবিসিকে বলেছিলেন, "এটা কোনো বুদ্ধিমত্তা নয়। এটা মূলত গত ২০ বছর ধরে ইন্টারনেটে যা কিছু আছে, তারই এমন একটা সংস্করণ যা আপাতত দেখে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।"
পার্টিকেল ফিজিক্স (কণা পদার্থবিজ্ঞান) ও স্ট্রিং থিওরির ক্ষেত্রে একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ মিচিও কাকু এআই'র চাইতে বরং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে যে বিপ্লব আসতে চলেছে, সেদিকে সকলের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চান। তার সর্বশেষ বইয়েও তিনি লিখেছেন যে এটি ইতিহাসের মোড় পরিবর্তন করে দিবে।
মানব মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতার সবচেয়ে কাছাকাছি যেটি আসতে পারবে তা হলো কোয়ান্টাম কম্পিউটার। কাকুর ভাষ্যে, "প্রকৃতি এখনও আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আমাদের মস্তিষ্ক এই জগতের সবচেয়ে জটিল জিনিস।"
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে এটির মানব মস্তিষ্কের জটিল যুগপৎ প্রতিক্রিয়ার মতোই সমান্তরাল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতার দিকে জোর দেন মিচিও কাকু।
প্রচলিত কম্পিউটারের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে যাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এটিকে বলা যায় গতির রাজা। অ্যাডভান্সড সুপারকম্পিউটারও যেসব সমস্যা সমাধান করতে হিমশিম খায়, কোয়ান্টাম কম্পিউটার সেসব জটিল সমস্যাও সমাধান করতে পারবে।
"ধরুন একটা ইদুর একটা গোলকধাঁধায় পড়ে গেছে। একটা ডিজিটাল ক্যালকুলেটর প্রতিটি জয়েন্টে ইঁদুরের গতিপথ হিসাব করবে, এভাবে আজীবন সময় লেগে যাবে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার তাৎক্ষণিকভাবে একই সময়ে সকল সম্ভাব্য পথ বিশ্লেষণ করে ফলাফল জানাবে", বলেন মিচিও কাকু।
সৌভাগ্যবশত, গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতো এআই নেতৃত্বরা শুধু এআই চ্যাটবটের পেছনেই শ্রম দিচ্ছে না; তারা কোয়ান্টামের পেছনেও বিনিয়োগ করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহারে বড় এক অগ্রগতির ঘোষণা দিয়েছেন প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের প্রকৌশলীরা। তারা কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে ত্রুটির মাত্রা কমিয়ে আনার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। তবে তারা এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ত্রুটির হার তলানিতে নিয়ে আসতে।