চীন যেন জেনেটিক ডেটার ‘সোনার খনি’! তবে বহির্বিশ্বের জন্য তা উন্মুক্ত নয়
ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসা, দীর্ঘায়ু সম্পর্কিত গবেষণা কিংবা যুগান্তকারী মেডিসিন ও ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের পেছনে বায়োসাইন্সের অভূতপূর্ব উন্নতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে অবশ্য বহু দেশ একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় পরাশক্তি চীন বায়োসাইন্সের উন্নতিতে বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। এক্ষেত্রে দেশের ১৪০ কোটি নাগরিকদের জেনেটিক ডেটা যেন চীনের বিজ্ঞানীদের জন্য বড় আশীর্বাদ।
চীনের বায়োব্যাংক ও রিসার্চ সেন্টারগুলোতে ইতোমধ্যেই বিশাল সংখ্যক জেনেটিক ডেটা সংগৃহীত রয়েছে। কিন্তু তবুও দেশটির সরকার বর্তমানে 'ন্যাশনাল জেনেরিক সার্ভে' নামের একটি উদ্যোগ চালু করতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন বায়োব্যাংককে আরও অধিক পরিমাণে সমৃদ্ধ করতে চায় এবং তদারকি করতে চায়।
একইসাথে সাম্প্রতিক সময়ে চীন নাগরিকদের জেনেটিক ডেটার বৈদেশিক প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের নীতিও গ্রহণ করেছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো নিয়েছে অনেকটা বিপরীতধর্মী নীতি। এই দেশগুলো বরং শর্তসাপেক্ষে নিজেদের তথ্যকে উন্মুক্ত করে বৈশ্বিকভাবে কাজে লাগানোর নীতি গ্রহণ করেছে।
একদিকে ন্যাশনাল সার্ভের উদ্যোগ ও অন্যদিকে ডেটায় বৈদেশিক প্রবেশের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ মূলত চীনের জেনেটিক রিসোর্সের ওপর জারি করা রেগুলেশনের অংশ। চলতি বছরের জুলাই থেকে এটি কার্যকর করা হয়েছে।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, চীন জেনেটিক ডেটাকে নিজ দেশেই আবদ্ধ করে রাখার সিদ্ধান্তের ফলে বৈশ্বিকভাবে এ সংক্রান্ত গবেষণা আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
এ সম্পর্কে দ্য সেন্টার ফর গ্লোবাল সাইন্স এন্ড এপিসটেমিক জাস্টিসের ডিরেক্টর ওয়াই ঝাং বলেন, "চীন সরকার জেনেটিক ডেটার ক্ষেত্রে খুবই কঠোর হতে চায়। কেননা তারা এর মধ্যে থাকা অর্থনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তির সম্ভবনাকে বুঝতে পেরেছে। তবে এ সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে চীনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতারও প্রয়োজন হবে।"
জেনেটিক ডেটা নিয়ে চীনের জারিকৃত রেগুলেশনের খসড়া তৈরির ক্ষেত্রে পরামর্শ সভায় ওয়াই ঝাং উপস্থিত ছিলেন। এই ডেটা সম্পর্কে তিনি বলেন, "ধরুন, বর্তমানে আপনার কাছে একটি সোনার খনি আছে। কিন্তু আপনি ঠিক জানেন না কীভাবে এটি খনন করতে হয়।"
মানুষের দেহে রয়েছে অসংখ্য জেনেটিক ডেটা; যার রয়েছে বহুমুখী কার্যকরী ব্যবহার। স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা বায়োসেফটির ক্ষেত্রে এগুলো অহরহ ব্যবহার করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বিজ্ঞানীরা জেনেটিক ডেটা ব্যবহার করে কীভাবে রোগবালাই দমন, ফার্মাসিটিক্যাল ও মেডিকেল সম্পর্কিত যন্ত্রের উন্নতি করা যায়, সেটির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও জন্মগত নানা বৈকল্য কীভাবে তৈরি হয় কিংবা জিন একজন ব্যক্তির দীর্ঘায়ুতে ঠিক কতটা অবদান রাখতে পারে সেটি নিয়েও গবেষণা চলছে। বিশেষ করে বর্তমানে চীনের জন্মহার হ্রাস এবং বয়স বেড়ে শ্রমশক্তির পরিমাণ কমে যাওয়া সংক্রান্ত গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে চীনের নানা স্থানে গড়ে উঠেছে জেনেটিক ডেটা নিয়ে কাজ করতে থাকা বহু নতুন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। একইসাথে তৈরি হয়েছে বিলিয়ন ডলার মূল্যের শত শত বায়োফার্মা কোম্পানি।
২০১৫ সালের চীন সরকারের হিসেব মতে, দেশটির জেনেটিক ডেটাবেজে মোট ৪৪ মিলিয়ন এন্ট্রি রয়েছে। একক দেশ হিসেবে যা সর্বোচ্চ বলে দাবি করা হয়েছে।
একইসাথে চীনের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টি জেনেটিক ডেটার সংরক্ষণের বিষয়টিকে সমর্থন দিচ্ছে। দলটি বায়োটেকনোলজিকে একটি 'কৌশলগত উদীয়মান শিল্প' হিসাবে অভিহিত করেছে। একইসাথে চীনের সাম্প্রতিক পঞ্চবার্ষিকী পলিসি বাস্তবায়নে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
২০২১ সালে মার্কিন সিনেটে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনায় জর্জটাউন সেন্টার ফর সিকিউরিটি এন্ড ইমার্জিন টেকনোলজির বায়োটেকনোলজি প্রোগ্রামের ডিরেক্টর আনা পুগলিসি বলেন, "চীন বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় সবচেয়ে বড় জিনোমিক হোল্ডিং সংগ্রহ করেছে।"
আনা পুগলিসি আরও বলেন, "কোষের ভেতরে থাকা জিন ঠিক কী কী কাজ করে সেটা বুঝতে পারা পরবর্তী প্রজন্মের মেডিসিন ও বায়োলজিক্যাল গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নিজ দেশের ও বহির্বিশ্বের জেনেটিক ডেটাগুলো এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সহায়ক হবে।"
অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে ওপরের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। এক্ষেত্রে জেনেটিক ডেটা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে পরোক্ষভাবে প্রতিযোগিতা চলছে। তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনের এগিয়ে যেতে আরও বহু বছর লাগবে বলে নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও থিংক ট্যাংকের পক্ষ থেকে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষ করে চীনের বিদ্যমান ডাটাবেসের 'বিশৃঙ্খল ও বিক্ষিপ্ত' প্রকৃতি এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও এ সমস্যা সমাধানে চীন সরকার ইতোমধ্যেই কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ সম্পর্কে ওয়াই ঝাং জানান, চীনে বায়োব্যংকিং প্রযুক্তি, অর্থাৎ বায়োলজিক্যাল স্যাম্পল কালেকশন পদ্ধতি এখনো 'খুব খণ্ডিত' ও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এমনকি দেশটির একটি প্রদেশের সাথে আরেকটি প্রদেশের ডেটা শেয়ারিং পদ্ধতিও বেশ জটিল অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও এটি নিয়ে কাজ করা বহু ছোট প্রতিষ্ঠানের জেনেটিক উপাদানগুলিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জন্য ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে এবং সনাক্তকরণ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যে উপযুক্ত কাঠামো প্রয়োজন, সেটি নেই৷"
ওয়াই ঝাং বলেন, "একটি বায়োব্যাংক পরিচালনা করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। আর সেক্ষেত্রে সংগৃহীত ডেটা ব্যবহার করতে না পারা এক প্রকার অপচয়।"
তবে সম্প্রতি জারিকৃত রেগুলেশনের অধীনে চীন জেনেটিক ডেটা আরও উন্নত ও কার্যকরীভাবে সংরক্ষণের আশা করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে গৃহীত 'ন্যাশনাল সার্ভে অফ হিউম্যান জেনেটিক রিসোর্সেস' উদ্যোগটি। এই সার্ভের মাধ্যমে ইন্সটিটিউট ও রিসার্চ সেন্টারগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি বিদ্যমান ডেটাগুলোকে আরও উন্নত করা হবে।
মূলত সার্ভেটি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর করা হবে। এক্ষেত্রে চীনের প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ তাদের অঞ্চলের জেনেটিক তথ্যগুলোকে একত্রিত করবে এবং পরবর্তীতে ঐ তথ্যগুলো দেশটির বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের জমা দেবে।
তবে চীনের জারি করা রেগুলেশনে বেশ অস্পষ্টতা রয়েছে। এক্ষেত্রে সার্ভের মেথডলজি ঠিক কী হবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়নি। একইসাথে সার্ভেতে কোন ধরণের প্রতিষ্ঠান কিংবা ডেটা অন্তর্ভুক্ত করা হবে সেটিরও উল্লেখ করা হয়নি।
জীববিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা ক্যাথরিন ওয়াং জানান, চীনের বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় এখনো সার্ভের কন্টেন্ট কিংবা ফোকাস সুনির্দিষ্ট করেনি। সার্ভেতে ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয় কাছে সংস্থা কিংবা ব্যক্তিগত সূত্র থেকে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ জেনেটিক ডেটাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করবে। এর পাশাপাশি নতুন সংগৃহীত ডেটাও সেখানে যুক্ত করা হবে।
ক্যাথরিন ওয়াং জানান, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেনেটিক বংশগতির ক্যাটালগ তৈরি করা হবে। একইসাথে এ সংক্রান্ত ডেটা বাহ্যিক স্থানান্তরের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যালোচনা পরিচালনা করা হবে।
রেগুলেশনটি চালুর পর থেকে প্রশ্ন উঠেছে যে, বায়োডেটার যুগে চীন কীভাবে একজন ব্যক্তির গোপনীয়তাকে রক্ষা করবে। বিশেষ করে যখন দেশটিতে বেশ কঠোরভাবে ডিজিটাল নজরদারি চালু রয়েছে।
যদিও রেগুলেশনে উল্লেখ করা হয়েছে, জেনেটিক রিসোর্সগুলো সংগ্রহণের ক্ষেত্রে ডোনারদের গোপনীয়তাকে সম্মান করা হবে। তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা যেন তথ্যের অপব্যবহারের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঠিক এমনি এক ঘটনা ঘটেছিল ২০২২ সালে। প্রায় এক বিলিয়ন চীনা নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যসহ একটি বিশাল অনলাইন ডেটাবেস এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অনিরাপদ এবং সকলের অ্যাক্সেসযোগ্য ছিল। যখন একজন ব্যাক্তি পরিচয় গোপন করে ডেটাগুলো বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়, তখন এটি সকলের সামনে আসে।
অন্যদিকে চীন সরকারের বিরুদ্ধে জেনেটিক ডেটা ব্যবহার করে পুলিশিং করার মতো অভিযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশেষ করে দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশে সরকার কর্তৃক লাখ লাখ নাগরিকের ডিএনএ স্যাম্পল ও বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহের তথ্য জানা গিয়েছে। ঠিক এই প্রদেশেই মুসলিম উইঘুর থেকে শুরু করে অন্য আর বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসবাস।
অভিযোগ রয়েছে যে, প্রদেশটিতে চীনা সরকারের সংখালঘু নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ক্যাথরিং ওয়াং বলেন, "সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের গুরুত্বপূর্ণ জেনেটিক তথ্য সংগ্রহের ইচ্ছা চীনা সরকারের সবসমই ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে সার্ভেটি সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকারকে বৈধতা দিয়েছে।"
প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ডিএনএর গুরুত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেল কিংবা ভূমির মতো প্রাকৃতিক সম্পদের মতোই ডিএনএ একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বলে মনে করা হচ্ছে। এমতবস্থায় চীন নিজ দেশের নাগরিকদের জেনেটিক তথ্য রক্ষা করতে চায়।
ক্যাথরিং ওয়াং জানান, ২০১৯ সালে জারি করা চীনের রেগুলেশনে বিদেশী সংস্থাগুলিকে দেশটির জেনেটিক উপাদান সংগ্রহ করতে বা বিদেশে সেই উপাদান সরবরাহের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে দেশটি জেনেটিক ডেটাগুলোকে জিনোমিক সিকোয়েন্সিং থেকে শুরু করে সাধারণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
যদিও চীনে ক্লিনিক্যাল স্টাডিজের মতো গবেষণামূলক কার্যক্রম এখনও সীমিত পরিসরে অনুমোদন করা হয়। তবে সেক্ষেত্রে বেশ কঠোর তদারকির মুখোমুখি হতে হয়। এক্ষেত্রে বিদেশী প্রতিষ্ঠান, চীনা অংশীদারদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হয় এবং নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে সরকারী অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়াও নতুন রেগুলেশনে অনুমতি নিতে গবেষণার অতিরিক্ত বিবরণ ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত শর্তাবলী আরও কঠোর করা হয়েছে।
মূলত প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অধীনে চীনা সরকার জাতীয় নিরাপত্তার উপর গুরুত্ব প্রদানের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগগুলো নিয়েছে। একইসাথে গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে জৈব নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিবেচনা করে রেগুলেশনটি তৈরি করা হয়েছে।
অন্যদিকে চীনা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, জেনেটিক উপাদানের 'অবৈধ বহিঃপ্রবাহ' রোধ করতেই এই কঠোর বিধিনিষেধ। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে গত শতাব্দীর শেষের দিকে একটি অনৈতিক ঘটনার বিষয় তারা সামনে নিয়ে আসে।
ক্যাথরিং ওয়াং জানান, বহু আগে হার্ভার্ডের একজন বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির এমন অভিযোগ আনা হয়েছিল। মূলত, তিনি অনুমতি না নিয়েই চীনা কৃষকদের জেনেটিক স্যাম্পল সংগ্রহ করছিল।
জেনেটিক স্যাম্পলকে অনৈতিকভাবে ব্যবহারের আরও বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে। ২০১৮ এক চীনা বিজ্ঞানী বিশ্বের প্রথম 'জিন-এডিটেড' শিশু নিয়ে কাজ করে। পরবর্তীতে যা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।
তবে জেনেটিক স্যাম্পলের অনৈতিক ব্যবহার রোধ করাই চীনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। বরং পাশাপাশি 'জিনোমিক সার্বভৌমত্ব' প্রতিষ্ঠা করাও দেশটির উদ্দেশ্য। অর্থাৎ, দেশের অভ্যন্তরে থাকা জেনেটিক উপাদানগুলোর ওপর শুধু নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।
যদিও জেনেটিক উপাদানের ব্যবহার ও স্থানান্তর সম্পর্কিত আইন অন্য বহু দেশেও প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে সেই আইনগুলো চীনের রেগুলেশনের মতো ততটা কঠোর নয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাংকের কথাই বলা যাক। এটি পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়। এই বায়োব্যাংকটি বিশ্বের নানা প্রান্তের গবেষকদের বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের সহযোগিতার অংশ হিসেবে নাম প্রকাশ না করে বিজ্ঞানীদের জেনেটিক ডেটা প্রদান করে থাকে।
একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ) এর পক্ষ থেকে জিনোমিক তথ্য সম্বলিত একটি ডেটাবেজ পরিচালনা করা হয়। এই ডেটাবেজের তথ্য আবেদনের ভিত্তিতে বিশ্বের নানা প্রান্তের বিজ্ঞানীরা তা ব্যবহার করতে পারেন।
এনআইএইচের ওয়েবসাইটে জেনেটিক ডেটাকে 'ক্রিটিক্যাল শেয়ারড রিসোর্স' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একইসাথে বলা হয়েছে, গবেষণার ফলাফল সময়মত অন্যদের সাথে শেয়ার করলে আবিষ্কার ত্বরান্বিত হতে পারে। একইসাথে বিজ্ঞানীদের জন্য সেটি হতে পারে বেশ উপকারী।
অন্যদিকে ওয়াই ঝাং মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্য জেনেটিক তথ্যের ব্যাপারে যে নীতি মানছে, চীন হাঁটছে ঠিক তার উল্টোপথে। চীন বরং জেনেটিক উপাদানগুলো নিজ দেশের মাঝে আটকে রাখতেই বদ্ধপরিকর।
চীনের এমন নীতি নিজেদের জন্যই নেতিবাচক হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। এতে করে চীনা বিজ্ঞানীদের বিশ্বের নানা প্রান্তের বিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করা সুযোগ সংকুচিত হবে। একইসাথে রয়েছে করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ স্থরিবতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বন্দ্বের মতো ফ্যাক্টরগুলো। এমতবস্থায় জেনেটিক ডেটা নিয়ে চীনের এমন রক্ষণশীল সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বরং দেশটির পিছিয়ে পরার কারণ হতে পারে।
এ বিষয়ে ওয়াই ঝাং বলেন, "গবেষণার ক্ষেত্রে চীনের জীববিজ্ঞান বিশ্বের অন্যতম একটি শক্তি। কিন্তু এটি এখনো সুপারপাওয়ার হতে পারেনি। তাই এক্ষেত্রে বেশ উন্নতি সত্ত্বেও দেশটির আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন।"
বর্তমানে বৈজ্ঞানিক যে অগ্রগতি, সেটি কয়েক দশক আগের তুলনায় অনেক ব্যতিক্রম। এ বিষয়ে ওয়াই ঝাং বলেন, "আজ আমরা বিগ ডেটা কিংবা ডেটা মাইনিং নিয়ে কথা বলছি। এমতবস্থায় জেনেটিক ডেটার ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা খোদ চীনের জন্যই ক্ষতিকারক হবে।"