রাজস্ব বাড়াতে মাঠ প্রশাসনকে কড়া বার্তা এনবিআর চেয়ারম্যানের
ব্যবসায়িক পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, জাতীয় বাজেটে বর্ণিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে কর্মকর্তাদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি জানতে দেশের কাস্টমস ও ভ্যাট এর মাঠ পর্যায়ের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি প্রতি মাসে ভ্যাট আদায়ে গ্রোথ ২০% এর নিচে যাতে না হয়, সে নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
মুনিম আরো মনে করেন, মাঠ পর্যায়ে অদক্ষতা দূর করা গেলে রাজস্ব সংগ্রহে ২০% থেকে ৩০% প্রবৃদ্ধি সম্ভব।
সভায় উপস্থিত মাঠ পর্যায়ের একজন কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রতি মাসে ভ্যাট আদায়ে গ্রোথ কমপক্ষে ২০ শতাংশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বা ব্যবসা যাই হোক না কেন, এই হারে আদায় করতে না পারলে জবাবদিহি করতে হবে ওই অফিসকে।"
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ভ্যাট আদায়ে গ্রোথ ছিলো ১৫ শতাংশের মত। তবে গত পাঁচ বছরে গড়ে এই গ্রোথ ১১%। এছাড়া কাস্টমস আদায়ে গ্রোথ আরো কম ছিল।
চলতি অর্থবছরের জন্য ৪.৩ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩০% হতে হবে।
গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, সিমেন্ট, ইস্পাত এবং ব্যাংকিংসহ অসংখ্য শিল্প উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ভোক্তার ব্যয় হ্রাসের কারণে সংকটের মুখে পড়েছে। ডলার সংকট এবং গত এক বছরে টাকার প্রায় ২৫% অবমূল্যায়ন ভোক্তাদের ব্যয় কমার পেছনে দায়ী।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু ব্যবসায়ী ধারণা করছেন, রাজস্ব বাড়াতে এনবিআরের এ উদ্যোগ তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, "আমরাও রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পক্ষে। তবে সবার ওপর, বিশেষ করে যারা অনুগত তাদের ওপর চাপ বাড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন সতর্ক করে বলেন, এই উদ্যোগ ব্যবসায়ীদের উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের উপর প্রভাব ফেলবে।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "উচ্চ ভ্যাটের হার ভোক্তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। মুদ্রাস্ফীতি ইতোমধ্যেই জনগণের অর্থ ব্যয়কে প্রভাবিত করছে, ভ্যাট বাড়লে এ সমস্যা আরও বাড়বে।"
এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অভিমত, অতিরিক্ত ভ্যাট আদায়ে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়ানো ছাড়া তাদের কোনো বিকল্প নেই।
এই কর্মকর্তারা চলমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্য পূরণের বিষয়েও উদ্বিগ্ন।
অর্থনৈতিক মন্থরতা, আমদানি-সম্পর্কিত এলসি রিকোয়ারমেন্ট পূরণে চ্যালেঞ্জ এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলো আসন্ন সময়ে রাজস্ব সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করছেন তারা।