বেনাপোল দিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ লাখ ২৯ হাজার যাত্রীর যাতায়াত
পদ্মা সেতু ব্যবহারে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রভাব পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে। বেনাপোল দিয়ে গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২১ লাখ ২৯ হাজার ৬৯৩ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এতে সরকারের প্রায় শতকোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
এর মধ্যে ভারতে গেছেন ১০ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৪ জন। আর ভারত থেকে দেশে এসেছেন ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৮ জন।
২০২১-২২ অর্থবছরে যাতায়াত করেন ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৮ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কল্যাণে ঢাকা থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব কমে যাওয়ায় এ রুটে যাত্রী পারাপার বেড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মালবাহী ট্রাককে আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী পাড়ে অপেক্ষা করতে হয় না। ফলে বেড়েছে বাণিজ্যিক সুবিধাও।
বন্দর সূত্র জানায়, দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতের বাণিজ্য শহর কোলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষাসহ স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ যান। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, যাতায়াতে সময় ও খরচ কম বিধায় ভারতগামী বেশিরভাগ মানুষ এ পথ ব্যবহার করে থাকেন।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, "পদ্মা সেতুর কল্যাণে ঢাকা থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব কমেছে ৭১ কিলোমিটার। এটি শুধু বাণিজ্যকে সহজ করেনি, এ পথে ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ কমিয়েছে। এখন ঢাকা থেকে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টায় বেনাপোলে পৌঁছানো যাচ্ছে। যাতায়াত সুবিধা ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য অন্য বন্দর বা আকাশপথ ব্যবহারকারীরা এখন বেনাপোল রুট ব্যবহার করছেন।"
তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় দুর্ভোগ কাটেনি যাত্রীদের। ভারত থেকে আসা যাত্রী জেসমিন বলেন, "পদ্মা সেতুতে যাত্রা সহজ হয়েছে। তবে বেনাপোল বন্দরে আগের ভোগান্তি রয়ে গেছে। বন্দরে যাত্রী নিরাপত্তা ও সুবিধা বাড়াতে হবে।"
বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্রমণ কর ১০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে; যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। এছাড়া ১২ বছরের নিচের যাত্রীদের জন্য ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর নির্ধারণ করেছে সরকার।
তবে পাঁচ বছরের নিচে, অন্ধ, ক্যানসার আক্রান্ত ও পঙ্গুত্ববরণকারী যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোনো ভ্রমণ করের প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। আগে ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর পরিশোধ করে আসা-যাওয়া করতে পারতেন যাত্রীরা।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবীব বলেন, "ভারত ও বাংলাদেশগামী যাত্রীদের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়। কোনো অনিয়ম করা হয় না। এ কারণে প্রতিবছর ভারত গমনকারী পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে।"
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন বলেন, "পদ্মা সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে দিয়েছে। সময় কম ও সাশ্রয়ী হওয়ায় যাত্রীরা এখন বেনাপোল চেকপোস্ট ব্যবহার করছেন বেশি। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে ভ্রমণ কর থেকে।"
যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীছাউনির জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে বলে জানান বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল।