বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলার জের ধরে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা
বরগুনায় ঈদের দিন বিকেলে পায়রা নদীর পাড়ে গোলবুনিয়া বল্ক ইয়ার্ডে ঘুরতে গেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিটিয়ে হত্যা করা হয় হৃদয় নামের এক কিশোরকে। প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাত নয়টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান হোসেন।
গ্রেপ্তারকৃত সাতজন হলেন নোমান কাজি (১৮), হেলাল মৃধা (২৬), সাগর গাজি (১৬), ইমন হাওলাদার (১৮), রানা আকন (১৬), সফিকুল ইসলাম ঘরামি (১৫) ও হেলাল ফকির (২১)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান হোসেন বলেন, হৃদয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত আমরা সাতজনকে আটক করেছি। আমাদের অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন বিকেলে পায়রা নদীর পাড়ের ব্লক ইয়ার্ডে শত শত তরুণ-তরুণী ঘুরতে যায়। ওইদিন বিকেলে হৃদয়ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে সেখানে ঘুরতে গিয়েছিল। এ সময় এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হলে হৃদয় তার সঙ্গে কথা বলে। হৃদয় ও তার বান্ধবীকে নিয়ে স্থানীয় নয়ন ও তার সহযোগীরা বাজে মন্তব্য করায় এর প্রতিবাদ করে হৃদয়।
কিছুক্ষণ পরই উত্যক্তকারী নয়ন, হেলাল, আবীর, তনিক এবং নোমানসহ তাদের সহযোগীরা লাঠিসোটা নিয়ে হৃদয়ের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হৃদয় দৌড়ে বাঁচতে চাইলেও তাকে তাড়া করে পেটাতে থাকে নয়ন, হেলাল, ও নোমানসহ তাদের সহযোগীরা। এক পর্যায়ে লাঠির আঘাতে ঢলে পড়ে হৃদয়।
সঙ্গে সঙ্গে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বরগুনা সরদর হাসপাতালে আনা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বরিশাল শেরই বাংলা হাসপাতালে আজ সকালে হৃদয়ের মৃত্যু হয়।
হৃদয় এ বছর টেক্সটাইল ভোকেশনাল স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রত্যাশী ছিল। সে তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বাবা দরিদ্র দেলোয়ার হোসেন একজন রিক্সাচালক। তারা বরগুনার চরকলোনি এলাকার চাঁদশী সড়কের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গোলবুনিয়া ব্লক ইয়ার্ডে শহর থেকে তরুণ-তরুণীরা ঘুরতে গেলে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিক কাজিসহ তার ভাই কনু কাজির ছেলে নোমান, স্থানীয় আলতাফ মৃধার ছেলে হেলাল, লিটন হাওলাদারের ছেলে নয়নসহ আবীর এবং তনিক ও তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন সময়ে অনেক অপিরিচত ছেলে-মেয়েকে অসম্মান করত। এরই ধারাবাহিকতায় হৃদয় হত্যার ঘটনা ঘটে বলেও তিনি জানান।
হৃদয়ের বন্ধু মিঠুন রয় জানায়, হৃদয়সহ তারা সাতজন বন্ধু ঈদের দিন বিকেলে পায়রা নদীর পাড়ে গোলবুনিয়া ব্লকে ইয়ার্ডে ঘুরতে গিয়েছিল।
হৃদয়ের আরেক বন্ধু ফেরদৌস মোল্লা জানায়, 'হামলাকারীদের সবাইকে আমরা চিনি না। তবে অনেক বয়স্ক লোকজনকেও এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিতে দেখা গেছে।'