চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার পর নাটকীয় জয় বাংলাদেশের
হতাশাজনক শুরুর পর অধিনায়ক সাইফ হাসানের ব্যাটে বাংলাদেশ যে সংগ্রহ গড়ে, তা যথেষ্ট ছিল না। মালয়েশিয়া যেভাবে এগোচ্ছিল, তাতে হারই চোখ রাঙাচ্ছিল বাংলাদেশকে। ১৫তম ওভারে দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখেন রিপন মণ্ডল। যদিও বিজয় উন্নি ও আইনুল হাফিসকে নিয়ে লড়াই চালানো বিরানদীপ সিং দলকে জয়ের পথেই রাখেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পারেননি তারা, ছোট সংগ্রহ নিয়েও নাটকীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
বুধবার হাংজুতে এশিয়ান গেমস পুরুষ ক্রিকেটের চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনালে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর মালয়েশিয়াকে ২ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামী ৬ অক্টোবর ভারতের মুখোমুখি হবে তারা। জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা পাঁচজন ক্রিকেটার নিয়ে একাদশ গড়ার পরও মালয়েশিয়ার বিপক্ষে এভাবে জিততে হলে সেমি-ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে যে বাংলাদেশের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে, তা বলাই যায়।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের পাঁচজনের টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছে। তারা হলেন জাকের আলী, মাহমুদুল হাসান জয়, রিপন মণ্ডল, রাকিবুল হাসান, শাহাদাত হোসেন দীপ ও সুমন খান। টি-টোয়েন্টিতে দল হিসেবে বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচে ১১ জন ক্রিকেটারের অভিষেক হয়। এরপর এই প্রথম একসঙ্গে বাংলাদেশের ৬ জন ক্রিকেটারের অভিষেক হলো।
টস জিতে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের শুরুর ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন। তিন ওভারের মধ্যে আউট হওয়া তিন জনের মধ্যে দুজন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। সেখান থেকে হাল ধরে হাফ সেঞ্চুরি করা সাইফ এবং আফিফ হোসেন ধ্রুব ও শাদাহাত হোসেন দীপের ব্যাটে ৫ উইকেটে ১১৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে সৈয়দ আজিজের পর বিরানদীপ, বিজয় ও আইনুলের লড়াইও মালয়েশিয়াকে জয় এনে দিতে পারেনি, তাদের ইনিংস শেষ হয় ৮ উইকেটে ১১৪ রানে। শেষ ওভারে ৫ রান প্রয়োজন ছিল, কিন্তু মালয়েশিয়া ২ রানের বেশি নিতে পারেনি।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেট হারায় মালয়েশিয়া। সাবলীল শুরু করা দলটির ওপেনার জুবাইদি জুলকিফলকে দলীয় ১৪ রানে ফিরিয়ে দেন রিপন মণ্ডল। তাদের চাপ বাড়ান আফিফ, ডানহাতি এই স্পিনার চতুর্থ ওভারে টানা দুই বলে দুটি উইকেট তুলে নেন। তার শিকারে পরিণত হয়ে থামেন মোহাম্মদ আমির ও আহমাদ ফায়েজ।
নিয়মিত ধারায় উইকেট হারাতে থাকা মালয়েশিয়া ধলীয় ৩৮ রানে খোয়ায় একপাশ আগলে খেলতে থাকা আজিজকে। রাকিবুল হাসানের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৩১ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২০ রান করেন তিনি। এরপর বিজয়ের সঙ্গে বিরানদীপের জুটিতে কিছুটা পথ এগোয় মালয়েশিয়া। ১৫তম ওভারে রিপন তোপ তাগেন। ২১ বলে একটি ছক্কায় ১৪ রান করা বিজয়কে ফেরানোর পরের বলেই শারভিন মুনিয়ান্দিকে ফিরিয়ে দেন তিনি।
এরপরও অবিচল থাকেন দলের দুঃসময়ে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা রিবানদীপ। আইনুলকে সঙ্গে নিয়ে সপ্তম উইকেটে ২৪ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন টি-টোয়েন্টিতে একাদশতম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হওয়ার আগে ১৩ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ রান করেন আইনুল।
শেষ ওভারে মালয়েশিয়ার প্রয়োজন পড়ে ৫ রান। বিরানদীপ উইকেটে থাকায় জয়ের আশাই দেখছিল দলটি। কিন্তু দারুণ বোলিং করা আফিফ শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে কোনো রানই দেননি, চতুর্থ বলে আউট করেন ৩৯ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা বিরানদীপকে। পরের দুই ব্যাটসম্যান ৩ রান তুলতে পারেননি। বাংলাদেশর রিপন ৩ ওভারে এক মেডেনসহ ১৪ রানে ৩টি উইকেট নেন। আফিফ ৪ ওভারে মাত্র ১১ রানে নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট পান রাকিবুল ও রিশাদ হোসেন।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই দিক হারায়। প্রথম ওভারেই ফিরে যান ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়, কোনো বল মোকাবিলা না করেই রান আউট হন অভিষিক্ত এই ওপেনার। সৌম্য সরকারের পর টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে কোনো বল না খেলেই আউট হলেন জয়। পরের ওভারে পারভেজ হোসেন ইমনও সাজঘরে, জয়ের মতো তিনিও রানের খাতা খুলতে পারেননি। যদিও ৮ বল খেলেন তিনি।
তৃতীয় ওভারে জাকির হাসানও ব্যর্থ, ৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন দিশেহারা। সাইফের সঙ্গে যোগ দিয়ে দলের হাল ধরেন আফিফ। এই জুটিতে ২৪ বলে ৩৮ রান পায় বাংলাদেশ। আফিফ উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলেন। যদিও তার ইনিংসটি লম্বা হয়নি, ১৪ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৩ রান করে আউট হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
এরপর আরও দুই অভিষিক্ত শাহাদাতের সঙ্গে ৪৫ ও জাকেরের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৩০ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ১১৬ রানে পৌঁছে দেন নেতৃত্বে থাকা সাইফ। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৫২ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় অপরাজিত ৫০ রান করেন। শাহাদাত ২৬ বলে ৩টি চারে ২১ ও জাকের ১৪ বলে অপরাজিত ১৪ রান করেন। মালয়েশিয়ার প্রাভানদীপ সিং ২টি এবং বিজয় উন্নি ও আনোয়ার রহমান একটি করে উইকেট পান।