শফিক-রিজওয়ানের সেঞ্চুরিতে রেকর্ড গড়ে শ্রীলঙ্কাকে হারাল পাকিস্তান
এবারের বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচ উপহার দিলো পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। দুর্দান্ত এক রান তাড়ায় বিশ্বকাপে রেকর্ড গড়ে লঙ্কানদের হারিয়েছে পাকিস্তান।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড এখন পাকিস্তানের দখলে। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের গড়া রেকর্ড ভেঙেছে বাবর আজমের দল।
শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৩৪৫ রানের লক্ষ্য ১০ বল আর ছয় উইকেট হাতে রেখেই টপকে গেছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে এত রান করেও এর আগে হারেনি কোনো দল।
যদিও পাকিস্তানের এই জয়ের নায়ক ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের এক নাম্বার ব্যাটসম্যান বাবর আজম নন। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা আবদুল্লাহ শফিক এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের বীরত্বে জিতেছে তারা।
শ্রীলঙ্কার হয়ে যা করেছেন কুশল মেন্ডিস ও সামারাবিকরামা, পাকিস্তানের হয়ে সেই কাজের দায়িত্ব নিলেন আবদুল্লাহ শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। দুই লঙ্কান ব্যাটারের সেঞ্চুরির জবাব দুই সেঞ্চুরিতে দিলেন পাকিস্তানি দুই ব্যাটার।
শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৩৪৫ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৭ রানের মধ্যে ইমাম উল হক ও অধিনায়ক বাবর আজমকে হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৭৬ রান যোগ করেন শফিক ও রিজওয়ান।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা শফিক। ১০৩ বলে ১০ চার ও তিন ছয়ে ১১৩ রান করে আউট হন এই ডানহাতি ওপেনার।
এরপর শাকিলকে নিয়ে পাকিস্তানকে জয়ের দিকে নিয়ে যান রিজওয়ান। পায়ে চোট পেয়েও ব্যাটিং চালিয়ে যান রিজওয়ান। শেষ পর্যন্ত ১২১ বলে আট চার ও তিন ছয়ে ১৩১ রান করে অপরাজিত থেকে ম্যাচসেরাও হন তিনি। শাকিল আউট হওয়ার আগে করেন ৩০ বলে ৩১ রান। ইফতিখার অপরাজিত থাকেন ১০ বলে ২২ রান করে। বড় লক্ষ্য হলেও সহজেই জিতে যায় পাকিস্তান। এই জয়ে বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে দুই জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে এখন বাবর আজমের দল।
শ্রীলঙ্কা অবশ্য নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতেই পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও বোলারদের হতশ্রী পারফরম্যান্সে ম্যাচ হেরেছিল তারা। এই ম্যাচেও ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কাজটা ঠিকঠাকই করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক রেকর্ড গড়ার ম্যাচে শ্রীলঙ্কা হারলেও দাপুটে ব্যাটিং করেছিলেন কুশল মেন্ডিস। বড় লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমে চোখ ধাঁধানো সব শটে ঝড়ো গতির এক ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই লঙ্কান ব্যাটসম্যান। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঝড় আরও বড় হলো মেন্ডিসের, এবার বিশ্বকাপে দেশের পক্ষে গড়ে ফেললেন দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে এগোচ্ছিলেন মেন্ডিস, সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু হতাশায় শেষ হয় তার ইনিংসটি। এবার আর ভুল করলেন না লঙ্কানদের ব্যাটিং লাইন আপের অন্যতম এই ভরসা, তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ও বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরি। এর আগে বিশ্বকাপে হাফ সেঞ্চুরিও ছিল না তার।
পাকিস্তানের বিশ্ব মানের পেসারদের বিপক্ষে খুনে ব্যাটিংয়ে ৭৭ বলে ১৪টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১২২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন মেন্ডিস। ৬৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন, যা বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরি। রেকর্ডটি কুমার সাঙ্গাকারার দখলে ছিল, ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ বলে সেঞ্চুরি করেন কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যান।
মেন্ডিসের রেকর্ড গড়ার ম্যাচে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন সাদিরা সামারাবিক্রমাও। ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ৮৯ বলে ১১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৮ রান করেন। ওয়ানডে ও বিশ্বকাপে এটাই তার প্রথম সেঞ্চুরি। এই দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ উইকেটে ৩৪৪ তোলে শ্রীলঙ্কা।
বড় সংগ্রহের পথে অবদান রাখেন পাথুম নিাসাঙ্কাও। লঙ্কান এই ওপেনার ৬১ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৫১ রান করেন। এ ছাড়া ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ২৫, অধিনায়ক দাসুন শানাকা ১২ ও দুনিথ ভেল্লালাগে ১০ রান করেন। পাকিস্তানের হাসান আলী ১০ ওভারে ৭১ রানে ৪টি উইকেট নেন। ১০ ওভারে ৬৪ রানে ২টি উইকেট পান হারিস রউফ। একটি করে উইকেট নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ নওয়াজ ও শাদাব খান।