অধিনায়কদের অধিনায়ক: মাশরাফির সেরা সৌরভ গাঙ্গুলি
ক্রিকেট ইতিহাস অতীত থেকে বর্তমানে পা রেখে সুদূর ভবিষ্যতেও হবে একমত। অধিনায়কদের 'অধিনায়ক' হতে পারেন সেই ক্ষণজন্মা মানুষ, যার তুলনা কেবল তিনি। মাশরাফি বিন মুর্তজার মনের ভেতরে কিছু না কিছু আক্ষেপ থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু সব সময়ই বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে অনেক অগ্রজের প্রশংসিত শব্দমালার সঙ্গে কুর্নিশও পান তিনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক অধিনায়কই একটি জায়গায় পুরোপুরি একমত; মাশরাফি 'অধিনায়কদেরও অধিনায়ক।' সেই মাশরাফির দৃষ্টিতে সেরা অধিনায়ক কে? দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের নিয়মিত আয়োজন 'অধিনায়কদের অধিনায়ক' সিরিজের প্রথম পর্বে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াসহ অধিনায়কত্বের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন মাশরাফি।
সেরার পশ্নে তিনি উল্লেখ করেছেন ক্রিকেট বিশ্বের কয়েকজন কিংবদন্তি অধিনায়কের নাম। বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক নির্দিষ্ট করে জানিয়েছেন কোন কারণে কাকে বেশি পছন্দ। মাশরাফি এটাও জানিয়েছেন, অধিনায়ক হিসেবে তার কোনো আইডল ছিল না। দলকে পথ দেখাতে কাউকে কখনও অনুসরণ করেননি তিনি।
মাশরাফি বিন মুর্তজা: অধিনায়ক হিসেবে আমি কাউকে কোনোদিন অনুসরণ করিনি। আমার দেখা সেরা অধিনায়কের কথা যদি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আমি সুমন (হাবিবুল বাশার) ভাইকে সবচেয়ে এগিয়ে রাখি। আর যদি পুরো বিশ্বের কথা বলি, সৌরভ গাঙ্গুলিকে আমার পছন্দ হতো। ইমরান খানের অনেক কথা শুনেছি, কিন্তু অতটা তো দেখিনি।
ইমরান খানকে দেখার সুযোগ হয়নি। মানুষের মুখে শোনার পর বলে তো লাভ নেই। যেটা দেখেছি, দেখার মধ্যে বলব রিকি পন্টিংয়ের কথা। যদিও সবাই বলবে ওই রকম দল পেলে আর কী লাগে! কিন্তু আমি বলব ওই রকম দল পেলে সেটা দেখভাল করতেও অনেক কিছু লাগে। খেলোয়াড়দের ইগো, তাদের দেখেশুনে রাখা; এমন অনেক বিষয় থাকে।
রিকি পন্টিংয়ের দলে রেকর্ডধারী অনেক খেলোয়াড় ছিলেন। তাদের ম্যানেজ করতেও অনেক কিছুর দরকার হয়। তো রিকি পন্টিংকে দেখেছি, সৌরভ গাঙ্গুলিকে দেখেছি। মহেন্দ্র সিং ধোনির কথা বলতে হবে। ধোনির শতভাগ অধিনায়কত্ব দেখেছি।
সেরার কথা বললে এই তিনজন। তবে এই তিনজনের মধ্য থেকে কেন জানি আমার কাছে সৌরভ গাঙ্গুলিকে একটু আলাদা মনে হয়। মাঝে আরেকজনের নাম বলি, হ্যান্সি ক্রনিয়ে। তার অধিনায়কত্ব দেখেছি। তবে তার কথা এখন আমি আর বলব না।
হয়তো তার সেই কেলেঙ্কারির জন্যই তার কথা বলব না। তবে সবাই জানে সে বিশ্বের বড় একজন অধিনায়ক ছিলেন। বিখ্যাত অধিনায়ক হিসেবে হয়তো তার নাম সারা পৃথিবীতে থাকতো। কিন্তু সেই ঘটনার কারণে ক্রিকেট ইতিহাস তাকে সেভাবে মনে করে না।
আমার দেখার মধ্যে আমি এই তিনজনের কথাই বলব, রিকি পন্টিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং সৌরভ গাঙ্গুলি। এদের মধ্যে যদি সবার আগে কাউকে রাখতে হয়, আমি সৌরভ গাঙ্গুলিকে রাখব।
আমি আগেই বলেছি, অধিনায়ক হিসেবে আমি কাউকে সেভাবে অনুসরণ করিনি। এখানে আসলে ভালো লাগার ব্যাপার আছে, তবে অনুসরণ করিনি কখনও। নিজের মাথায় যা ছিল, সেটা খাটিয়েই অধিনায়কত্ব করার চেষ্টা করেছি।
রিকি পন্টিংয়ের কাছ থেকে নিয়েছি বা শিখেছি, এমন বলার মতো কিছু নেই। ধোনির কিছু বিষয় আছে। সৃজনশীলতার ব্যাপারের দিক থেকে ধোনি সব সময়ই আলাদা। পোলার্ডকে আউট করানোর জন্য ধোনির ফিল্ডিং সেট আপ করতে দেখেছি। স্লিপ আনা বা পজিশন পরিবর্তন করা, এটা ধোনির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখেছি।
সৌরভ গাঙ্গুলিকে দেখেছি দলকে এক করতে। কিন্তু সিদ্ধান্তের কথা বললে, সেটা বেশি দেখেছি ধোনির ক্ষেত্রে। সৌরভ গাঙ্গুলিকে দেখেছি ম্যান ম্যানেজমেন্ট, দলের বোঝাপড়া, দলকে কীভাবে সাজাতে হবে, দল নিয়ে কীভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, উন্নতি করা যাবে কীভাবে, কোন খেলোয়াড় দলের প্রতি নিবেদিত; এসব ব্যাপার নিয়ে কাজ করতে।
ভারত দলের জন্য এটা যখন সবচেয়ে বেশি জরুরী ছিল, সৌরভ গাঙ্গুলি তখন এটা দলের জন্য করেছেন। আর ধোনি ওই সেটআপটা পেয়েছে। ধোনির দরকার ছিল পারফরম্যান্স এবং কীভাবে সেটা অর্জন করা যাবে, যেটা ধোনি করে দেখিয়েছে।