মালিকদের প্রস্তাবের চেয়ে বেশি হবে শ্রমিকদের মজুরি: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে তৈরি পোশাক কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি বলেছেন, গার্মেন্টস কারখানার মালিকরা যে ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেছেন, শ্রমিকদের মজুরি তার চেয়ে বেশি নির্ধারণ হবে। আগামী ১ নভেম্বর ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সভায় এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আলোচনা করবে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে এসব কথা বলেন। গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ চলাকালে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান উপস্থিত ছিলেন।
শাহজাহান খান এ সময় বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী একটি গ্রহণযোগ্য মজুরির ব্যবস্থা করবেন। এখনও মজুরি নির্ধারণ হয়নি, এখনো হাতে অনেক সময় আছে। বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই; প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখেন।'
মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, 'মজুরি নির্ধারণের জন্য এখনো এক মাস বাকি আছে। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, এমন গুজব ছড়ানো হয়েছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মজুরি বোর্ড ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করবে।'
বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে দাম, তাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া উচিত বলে মনে করেন—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কি সম্ভব? আমি যেখানে বসে আছি এখান থেকে আমি এর উত্তর দিতে পারব না। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড এটা নির্ধারণ করবে।'
মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকার যে প্রস্তাব দিয়েছে, ন্যূনতম মজুরি তার চেয়ে বেশি হবে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'অবশ্যই বেশি হবে। পোশাক কারখানার মালিকপক্ষ যে প্রস্তাব দিয়েছে, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তার থেকে বেশি অবশ্যই নির্ধারণ হবে।'
একই প্রশ্নের উত্তরে শাজাহান খান বলেন, 'মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ দুটি প্রস্তাব দেবে। তারপর দুই পক্ষ দরকষাকষি করবে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান একটি জায়গায় সুপারিশ করবেন। এরপর মন্ত্রণালয়ে আসে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন, উনি সাধারণত বাড়িয়ে দেন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, এটা মানতে হবে সবাইকে।'
এর আগে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করতে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ৫ বছরের জন্য নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়। আগামী ৩০ নভেম্বর এর মেয়াদ শেষ হবে। তিনি বলেন, মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বসেছেন। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়েই ন্যূনতম মজুরি কত হতে পারে, তা জানিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, 'গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। শ্রমিকদের মধ্যে কে বা কারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে যে মালিকপক্ষের প্রস্তাব করা ১০ হাজার ৪০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। শ্রমিকরা এই বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। এটা ঠিক না।'
শাজাহান খান বলেন, 'গাজীপুরসহ কয়েক জায়গায় গত কয়েক দিন ধরে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এর ব্যাপ্তি বাড়ছে। যারা বিভ্রান্তি ছড়ালেন, কী উদ্দেশ্যে ছড়ালেন? মজুরি বোর্ড চারটি সভা করছে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।'