ভারতের ভাঙন শুরু : চিদম্বরম ; ‘চরম বিশ্বাসঘাতকতা’ : মেহবুবা-ওমর
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্বু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর এর বিরোধীতা শুরু করেছেন অনেকেই।
পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা আনন্দবাজার জানিয়েছে, রাজ্যসভা থেকে বেরিয়েই ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বলেছেন, “এখন থেকেই শুরু হয়ে গেল ভারতের ভাঙন।”
রাজ্যসভার বিরোধী দলীয় নেতা গুলাম নবি আজাদের বলেছেন, হত্যা করা হয়েছে ভারতীয় সংবিধানকে।
জম্মু-কাশ্মীরের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লা গৃহবন্দি থাকায় গণমাধ্যমে কোন বক্তব্য না দিতে পারলেও তারা তীব্র বিরোধীতা করেছেন মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের।
সোমবার ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিরোধীদের তুমুল বাধা ও বাক-বিতণ্ডার মধ্যে কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেন।
৩৭০ নম্বর ধারার কারণে জম্মু ও কাশ্মীর অন্য যেকোনো ভারতীয় রাজ্যের চেয়ে বেশি স্বায়ত্বশাসন ভোগ করত। আর এ ধারাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর ভিত্তিতেই কাশ্মীর রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান ও একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দেয়। এছাড়া পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্য সব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দেয়।
আনন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের কথা এ দিন অমিত শাহ রাজ্যসভায় ঘোষণা করা মাত্রই তুমুল হট্টগোল শুরু করে দেন বিরোধী দলগুলির সাংসদরা।
কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, ডিএমকে-র তিরুচি শিবা, এমডিএমকে-র ভাইকোদের নেতৃত্বে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধী সাংসদরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। জম্মু-কাশ্মীরের দল পিডিপির দুই সাংসদ সংবিধানের প্রতিলিপি সংসদের মধ্যেই ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেন।
আনন্দবাজার বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগেই রুলিং দিয়েছিলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ও উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তবে তাতেও হট্টগোল থামানো যায়নি। হট্টগোলের মধ্যেই অমিত শাহ কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র এবং বিল পড়ে শোনাতে থাকেন।
মোদী সরকারের এ সিদ্ধান্তের সবচেয়ে করা সমালোচনা করেছেন পি চিদম্বরম। গুলাম নবি আজাদ, ডেরেক ও’ব্রায়েনদের সাথে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি।
তিনি বলেন, “সাংবিধানিক ইতিহাসে আজ কালো দিন। সরকার যা করেছে, তা অভূতপূর্ব। এটা যদি জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে করা যায়, তা হলে দেশের অন্য রাজ্যগুলোর প্রত্যেকটার সঙ্গেই করা যেতে পারে।”
এর ব্যাখ্যা দিয়ে প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতা বলেন, “প্রথমে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়া হবে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হবে, বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হবে, বিধানসভার ক্ষমতা সংসদের হাতে যাবে, সরকার সংসদে একটা প্রস্তাব আনবে, সেটাতে সংসদ অনুমোদন দেবে এবং রাজ্যটা আর থাকবে না।”
আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা রাজ্যকে এই ভাবে ভেঙে দেওয়া যাবে, দুটো অথবা তিনটে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার যদি এই পথেই এগোতে থাকে, তা হলে এখন থেকেই ভারতের ভাঙন শুরু হয়ে গেল।”
জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যসভায় বর্তমানে কংগ্রেসের দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, “সংবিধানকে হত্যা করা হল। ভারতের মানচিত্র থেকে একটা রাজ্য আজ মুছে গেল।”
রাজসভায় যখন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছিলেন তখন অন্য দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আব্দুল্লাহকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিলো তাদের বাড়িতে।
গণমাধ্যমে বক্তব্য না দিয়ে তাই তাদের টুইটারের পোস্ট দিয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা জানাতে হয়।
মেহবুবা মুফতি তার টুইটার পোস্টে বলেন, “আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের কালোতম দিন। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রত্যাখ্যানের এবং ভারতের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত উল্টো ফল দিল। ৩৭০ ধারা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত একতরফা ভাবে ভারত সরকার নিয়েছে, তা বেআইনি ও অসাংবিধানিক এবং এই সিদ্ধান্ত ভারতকে জম্মু-কাশ্মীরে একটি দখলদার শক্তিতে পরিণত করবে।”
ওমর আবদুল্লা লিখেছেন, ‘‘১৯৪৭ সালে যখন জম্মু-কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে জুড়েছিল, তখন রাজ্যের মানুষ ভারতের উপরে যে বিশ্বাস রেখেছেন, সে বিশ্বাস আজ সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে দেওয়া হল।”
ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী এবং বিপজ্জনক ফলাফল হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ওমর আবদুল্লা।