অবরোধে হাসপাতালগুলোতে রোগী আসতে পারছে না
রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর আউটডোরে সাধারণত সকাল থেকে রোগী ও তাদের স্বজনদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। তবে রবিবার বিএনপির অবরোধের প্রথম দিনে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ তুলনামূলক কম ছিলো। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতেও 'ইমার্জেন্সি' ছাড়া রোগী কম গেছে। অবরোধের কারণে হাসপাতালে আসতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ঢাকার বাইরের রোগীদের।
রবিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল সহ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, অবরোধে যাতায়াতের সমস্যার কারণে একেবারে জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া হাসপাতালে যাচ্ছেনা রোগীরা। এছাড়া ঢাকার রোগীরা রিকশা বা সিএনজিতে হাসপাতালে গেলেও ঢাকার বাইরের রোগীর চাপ একেবারে কম।
বিএসএমএমইউ এর আউটডোর-২ এর চারটি ফ্লোরে প্রতিদিন রোগীর উপচেপড়া ভিড় থাকে। রবিবার দুপু্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ফ্লোরে রোগীর ভিড় অনেক কম। তিন তলায় রোগীদের অপেক্ষারত চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় তমাল নামের এক আনসার সদস্যকে। তিনি বলেন, "অন্যান্য দিন এই সময় রোগীর লাইন ঠিক করতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু হরতাল অবরোধের কারণে এখন রোগীর চাপ অনেক কম।"
নারায়ণগঞ্জ থেকে ৬০ বছর বয়সী মা আকতারা বেগমকে নিয়ে সকাল ১১টায় বিএসএমএমইউতে আসেন রুবেল মিয়া। কিডনি ও হার্টের সমস্যায় ভুগছেন আকতারা বেগম। গতকাল অনেক বেশি অসুস্থ বোধ করায় সকাল ৭টায় মাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাসে, সিএনজিতে ও পায়ে হেঁটে কয়েক দফা যানবাহন পরিবর্তন করে হাসপাতালে আসতে হয়েছে তাকে। খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা। এর আগে গত মাসে ডাক্তার দেখাতে আসতে বাসে তাদের খরচ হয়েছিলো ৭০ টাকা।
রুবেল মিয়া বলেন, "রাস্তায় পুরোটা সময় ভয়ে ভয়ে এসেছি। মা এতোটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে হাসপাতালে না এসে উপায় ছিলোনা।"
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আউটডোরে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নেয়। অবরোধের কারণে রোববার বেলা ১টা পর্যন্ত ৬০০ রোগী টিকিট কাটে বলে জানান টিকিট কাউন্টারে কর্মরত ব্যাংক কর্মী মিতা রানি।
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রবিবার অন্যান্য দিনের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ রোগী কম এসেছে। এই হাসপাতালে সকালে ও বিকেলে দুই শিফটে আউটডোরে রোগী দেখা হয়। বিকেল ৩টার শিফটে ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল দিতে রোগীরা ১২টার সময় থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে কোন লাইন দেখা যায়নি। রোগীদের জন্য অপেক্ষারত চেয়ারে ১২-১৫ জনকে বসে থাকতে দেখা গেছে।
এখানকার রিসেপশনিস্ট মোঃ রায়হান টিবিএসকে বলেন, "সাধারণত আমাদের এখানে দুই শিফটে ২৫০-৩০০ রোগী চিকিৎসা নেয়। তবে হরতাল, অবরোধের কারণে গত শনিবার থেকে একেবারে রোগী কম। আজ (দেড়টা পর্যন্ত) সকালে ৬০ জন রোগী ডাক্তার দেখিয়েছে। বিকেলে ১০-১২ জনের বেশি রোগী হবে না মনে হচ্ছে। ঢাকার বাইরের রোগীরা আসতে পারছেনা।"
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আউটটোরে সাধারণত প্রতিদিন ৩০০ রোগী চিকিৎসা নেয়। রবিবার সেখানে ১৫০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির রেসিডেন্ট সার্জন ডা. মোঃ তারিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, "অবরোধের কারণে দূরের রোগীরা কম আসছে, আউটডোরে রোগীর চাপ কম। তবে ইমার্জেন্সিতে রোগীর চাপ আগের মতই স্বাভাবিক আছে।"
অবরোধের কারণে বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহতরা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রবিবার পর্যন্ত বাসে অগ্নিদগ্ধ তিনজন হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, "অবরোধে রোগীর উপরে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে রোগী কম আসছে। তবে যাদের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন তারা অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে উপস্থিত হচ্ছে। সার্বিকভাবে হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা কম।"
অবরোধের কারণে প্রাইভেট হাসপাতালে ও চেম্বারে রোগীর চাপ কমেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ল্যাবএইড হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, "আউটডোরে রোগীর চাপ একেবারে কম। ইমার্জেন্সি রোগী যাদের অ্যাম্বুলেন্সে আনা যায় তারা আসছে। শুক্র ও শনিবার রোগীর চাপ বেশি ছিলো, কিন্তু আজ (গতকাল) অবরোধের কারণে রোগী কম। প্রাইভেট চেম্বার চালু থাকলেও সেখানেও রোগীর চাপ কম।"