শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলাটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: আদালতে ড. ইউনূস
গ্রামীণ টেলিকমে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূস বলেছেন, এই মামলাটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিনি বলেন, 'শ্রম আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।'
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টার পর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ের দক্ষিণপাশে শ্রম ভবনে অবস্থিত শ্রম আদালত চত্বরে যান তিনি। শ্রম ভবনের ছয় তলায় অবস্থিত তৃতীয় শ্রম আদালতের জেলা ও দায়রা জজ শেখ মেরিনা সুলতানার এজলাস কক্ষে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়; শেষ হয় প্রায় সোয়া তিনটায়।
দুপুর ১২টার দিকে আদালতে যাওয়ার পর ১টা ১০ মিনিটে মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এজলাস কক্ষে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ মামলার অন্য আসামী গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম এবং মো. শাহজাহানও কাঠগড়ায় দাঁড়ান।
ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'চার আসামীর মধ্যে মো. শাহজাহান শারীরিকভাবে প্যারালাইজড। তিনি নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। এছাড়া ড. ইউনূসও বয়স্ক মানুষ। এরপরও ছয় তলায় ওঠার জন্য লিফট বন্ধ রাখা হয়েছিল বৃহস্পতিবার।'
তিনি বলেন, 'আমরা আদালতে বিষয়টি বলেছি। নতুন ভবনে এই আদালত স্থানান্তর করার পর যাতে মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়। আদালত আগামী ১৬ নভেম্বর মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেছেন।'
তিনি বলেন, 'এই মামলায় আমরা কোনো সাফাই সাক্ষ্য দেবোনা। ফলে মামলার শেষ ধাপ যুক্তিতর্ক উপস্থান শুরু হবে ১৬ নভেম্বর।'
১টা ১৬ মিনিটে শারীরিক অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক ৪ বিবাদীকেই কক্ষের ভেতরে বেঞ্চে বসে শুনানি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে ২২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুযায়ী, ড. ইউনূসসহ ৪ আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের জবানবন্দীতে বলা হয়, শ্রম আইনের ২৩৪ ধারার বিধান লঙ্ঘিত হলে ২৩৬ ধারায় সরকার অনেকগুলো প্রতিকারের বিধান রেখেছে। শ্রম আইনের ২৩৬ ধারার উপরোক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ না করেই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বিবাদী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারে না। এটি সম্পূর্ণভাবে আইনের লঙ্ঘন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি কোনভাবেই ফৌজদারি অপরাধ না।
দেশের উন্নয়নে ড. ইউনূসের ভূমিকা উল্লেখ করে বলা হয়, 'বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেখান যিনি দেশের জন্য এত কাজ করেছেন। এতগুলো বিদেশি ব্র্যান্ড কোম্পানিকে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে এনেছেন। এত এত মানব সম্পদ তৈরি করেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা কোন কিছুই তিনি নিজের কোন আর্থিক লাভের জন্য করেননি। এ ধরনের অসংখ্য অবদান রাখার পরও এই নিঃস্বার্থ মানুষটিকে মিথ্যা অপরাধে দাঁড়াতে হচ্ছে বিচারের কাঠগড়ায়।'
মূলত, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে বাদী হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। এতে ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে বিবাদী করা হয়।
মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইন ৪ এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
আলোচিত এই মামলায় ড, ইউনূসসহ চার আসামীর বিরুদ্ধে মামলার বাদীসহ চারজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরপর আইন অনুযায়ী বৃহস্পতিবার আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য দিলেন আসামীরা।