প্রণোদনা পায়নি জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উদ্যোক্তারা
দেশের অন্যতম ভারি শিল্প হচ্ছে জাহাজ নির্মাণ সেক্টর। দেশের চাহিদা মিটিয়ে অনেকে তৈরি জাহাজ রপ্তানি করছে বিদেশেও। বিশ্বব্যাপী করোনার মহামারির কারণে এ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য সরকার বিভিন্ন ভারি শিল্প খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করে। কিন্তু সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত কোন ধরনের প্রণোদনা পায়নি এ সেক্টরের কোনো উদ্যোক্তা। তাই দ্রুত প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এ খাতে শিল্প উদ্যোক্তরা।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, এখাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি। তাই ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে সরকার থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা আশা করে এখাতের উদ্যোক্তরা। এখাতে এ টাকা যদি সরকার প্রণোদনা হিসাবে দেয় তাহলে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এ সেক্টর। পাশাপাশি সরকার বছরে ট্যাক্সবাবদও আয় করতে পারবে ২০০ কোটি টাকাও।
ইতোমধ্যে শ্রমিকদের মজুরি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ঋণের জন্য এখাতে ক্ষতি হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা। এ করোনার প্রভাবে স্থগিত রয়েছে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি অর্ডারও। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকজ থেকে প্রণোদনার জন্য আবেদন করেও কেউ পাননি কোন ধরনের ঋণ সহায়তা।
অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার ২০১৮ সালে এ খাতের জন্য যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল তাও আটকে আছে মন্ত্রণালয়ে। সম্প্রতি এ করোনার মহামারির কারণে নতুন করে প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করে। কিন্তু এ প্যাকেজেও সহায়তার জন্য আবেদন করেছি আমরা। কিন্তু আমরা কোন ধরনের সহায়তা পায়নি। দেশের চাহিদার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্র আয়কারি এ সেক্টরে প্রণোদনা না পেলে সংকটে পড়বে উদ্যোক্তরা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে নির্মিত ছোট জাহাজগুলোর কদর রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। ফল এ করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এক লাখ কোটি টাকার অর্ডার পেতে পারে বাংলাদেশ। তাই এ সেক্টরকে এগিয়ে নিয়ে সরকারের প্রণোদনার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন উদ্যোক্তরা।
জানা যায়, জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকার ২০১৮ সালে ৯ শতাংশ সুদে একটি প্রণোদনা ঘোষণা করে। ওই প্রণোদনার ৯ শতাংশ সুদের মধ্যে ৪ শতাংশ সরকার বাকি ৫ শতাংশ উদ্যোক্তদের দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই প্রণোদনা মন্ত্রণালয়ের লাল ফিতার দৌরাত্বে আলোর মুখ দেখেনি
সরকার ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেওয়া, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হয় প্রণোদনা প্যাকেজ -১। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে ৪ শতাংশ ঋণগ্রহীতা শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট সাড়ে ৪ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।
রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের (এইওএসআইবি) তথ্যানুযায়ী, দেশে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান জাহাজ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ২০টি রপ্তানিমুখী এবং ৮০টি অভ্যন্তরীণ জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। শিপইয়ার্ডগুলির ৭০ শতাংশ ঢাকা এবং এর আশেপাশে অবস্থিত, ২০ শতাংশ চট্টগ্রামে এবং ১০ শতাংশ খুলনা ও বরিশালে অবস্থিত।
জাহাজ নির্মাণের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এফএমসি ডক ইয়ার্ডে দেশি-বিদেশি প্রায় ৫২টি অর্ডার স্থগিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াসিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে সরকারের কিছু কাজের অর্ডার থাকায় আমরা করোনার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টাইনের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে নিয়েছি। কিন্তু বিদেশি অর্ডার স্থগিত হয়ে যাওয়া এবং সরকার ঘোষিত কোনো ধরনের প্রণোদনা না পেলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। আমরা কোনো ধরনের খেলাপি না হলেও প্যাকেজের আওতায় ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করেও কোনো সহায়তা পাচ্ছি না। তাই দ্রুত এ ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি।