যশোরে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাপা-তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন যশোরের একই আসনের দুই প্রার্থী। যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী এম এ হালিম ও তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব.) আ. ন. ম. মোস্তফা বনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
এম এ হালিম বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) রাতে উপজেলার গোপালপুরে নিজ বাড়িতে এবং মোস্তফা বনি আজ শুক্রবার বিকেলে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান।
নির্বাচন ত্যাগের ঘোষণায় দুই প্রার্থীই দলের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন। এম এ হালিম বলেছেন, দলের 'কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ক্ষোভ থেকে' তিনি ভোটের লড়াই থেকে সরে পড়েছেন। অন্যদিকে 'তৃণমূল বিএনপি তার জন্য উপযুক্ত দল নয়' — এমনটা জানিয়ে নির্বাচনের মাঠ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন মোস্তফা বনি।
এম এ হালিম অভিযোগ করে বলেন, 'আমি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিলাম। ভোটের শুরু থেকে দেখছি, আমার দলের কেন্দ্রীয় নেতারা রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছেন। দলের কিছু প্রার্থীর নির্বাচনি পোস্টার নিয়েও ইতোমধ্যে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।'
মনোনয়ন দেওয়ার পর কেন্দ্রের কোনো নেতা তাদের ভোটের খবর নেননি অভিযোগ করে তিনি বলেন, এতে স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এম এ হালিম বলেন, 'আমরা সাধারণ জনগণের ভোট নিয়ে জিততে চেয়েছিলাম। বড় দুটি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে। এ জন্য আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি, অধিকাংশ ভোটার নির্বাচনে ভোটের মাঠে আসবেন না।'
'সে জন্য ভোটারদের মতামত ও আমার দলের নেতা-কর্মীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি,' বলেন জাতীয় পার্টির এই নেতা।
অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপিকে একটি 'অত্যন্ত কৃশকায়, তলাবিহীন ঝুঁড়ির মতো দল' আখ্যা দিয়ে মেজর (অব.) আ. ন. ম. মোস্তফা বনি বলেন, 'নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করার আগে থেকেই অত্যন্ত হীনমন্যতায় ভুগছি এবং আত্মদহনে দগ্ধ হচ্ছি।'
'একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার জন্য সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে এমন একটি দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অত্যন্ত বেমানান এবং অমর্যাদাকর। এই দল আমার জন্য মানানসই নয় এবং সংসদ সদস্য পদে প্রার্থিতা করার জন্য উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম নয়,' বলেন তিনি।
মোস্তফা বনি আরও বলেন, 'দেশের বিরাজমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা কতটুকু সমীচীন হবে, একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে সে বিষয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। দেরিতে হলেও এ বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।'
প্রসঙ্গত, আসন্ন ৭ তারিখের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিরোধী দলে থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করা তিনটি দল জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। আবার কোনো কোনো প্রার্থী সরে না দাঁড়ালেও নির্বাচনি মাঠে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। গত ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এ তিনটি দলের অন্তত ৩০ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
নির্বাচন ত্যাগ করা এসব প্রার্থীর অভিযোগ, দলের শীর্ষ নেতারা তাদের খোজঁ-খবর নিচ্ছেন না, দলীয় তহবিল থেকে তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা ও আসন ভাগাভগির কারণে সমঝোতার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দেওয়া ১৩৫টি আসনের মধ্যে দলটির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরীর সিলেট-৬, মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকারের নারায়ণগঞ্জ-১ ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনুর পাশা চৌধুরীর সুনামগঞ্জ-৩ বাদে বাকি আসনগুলোতে প্রার্থীদের তেমন প্রচারণা নেই। প্রার্থী হলেও প্রচারে না থাকার বিষয়ে নিজেদের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থীরা।
প্রার্থীদের অভিযোগ, দল থেকে তাদের সেভাবে কোনো খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচনি ব্যয় পরিচালনার জন্য দল থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তাও তারা পাচ্ছেন না।
অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে ২৬৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। তবে পরবর্তীসময়ে দলটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কয়েক ধাপে মিটিং করে ২৬টি আসনে সমঝোতা করে। এ নিয়ে শুরু থেকেই দলের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রার্থীদের অনেকেই বলছেন, শুরু থেকেই জাতীয় পার্টির 'সমঝোতার' মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে ছিলেন তারা। তারা বলছেন, সারা দেশে ৩০০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার সক্ষমতা থাকার পরও কেন্দ্রীয়ভাবে ২৬টি আসনের সমঝোতা করে নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টির জন্য 'ভুল' ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, জাতীয় পার্টির ২৬টি আসনে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্তের কারণে বাকি আসনগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে 'অবহেলিত' মনোভাব তৈরি হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে যা নির্বাচন পরবর্তীসময়ে সাংগঠনিক শক্তির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।