প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের প্রোস্টেট ক্যান্সার অস্ত্রোপচারের কথা গোপন রাখে পেন্টাগন
প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পরার পর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ডিসেম্বরে একটি অস্ত্রোপচারের পর থেকে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
সংক্রমণের কারণে অস্টিনকে ১ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং তারপরে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল।
হোয়াইট হাউইসের ভাষ্যমতে, রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন মঙ্গলবারে প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পরার বিষয়টি জানতে পারেন।
৭০ বছর বয়সি লয়েড অস্টিন সমালোচনার সম্মুখীন হন যখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তিন দিনের জন্য তাঁর হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়ে জানতে পারেননি।
তারপর থেকে তিনি "জনগণকে যথাযথভাবে বিষয়টি নিশ্চিত না করার জন্য" ক্ষমা চেয়েছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে প্রেসিডেন্টের পরেই দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি মন্ত্রিসভারও একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। হোয়াইট হাউসকে দেরিতে অবহিত করার বিষয়টি সম্ভাব্য জাতীয় নিরাপত্তায় উদ্বেগের পাশাপাশি বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে স্বচ্ছতার সমস্যাকে তুলে ধরে।
প্যান্টাগন জানিয়েছে, অস্টিন মঙ্গলবারে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি কখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন সেই ব্যাপারে তাঁর মুখপাত্র সাংবাদিকদের কিছু জানায়নি।
তাঁর মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, "প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিন পুনর্বাসনের কাজ ভালোভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি এখন ভালো আছেন। তিনি তার সিনিয়র কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। প্রয়োজনীয় সুরক্ষিত যোগাযোগের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি তিনি বিশ্বব্যাপী ডিওডি নিরীক্ষণের কাজগুলো করে যাচ্ছেন।"
হোয়াইট হাউজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনের হাসপাতালে ভর্তি থাকার বিষয়ে কীভাবে কি করছে সে ব্যাপারে জানতে চেয়ে মঙ্গলবারের এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা বারবার প্রশ্ন করেছে।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, "রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনকে 'আজকে' প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পরার বিষয়টি জানানো হয়েছে।" তিনি বলেন, "আজকে সকালের আগ পর্যন্ত হোয়াইট হাউজের কেউই জানতোনা যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী অস্টিনের প্রোস্টেট ক্যান্সার আছে।"
তিনি জানান রাষ্ট্রপতি প্রাথমিকভাবে অস্টিনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত কিন্তু এই যোগাযোগের ঘাটতিও তাদের জন্য চিন্তার বিষয়। কিরবি বলেন, "বিষয়টা এমন হওয়ার কথা না।"
কিরবির ভাষ্যমতে, বাইডেন এবং অস্টিনের মধ্যে শেষ কথা হয়েছিলো গত সপ্তাহের শেষে।
অস্টিন বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন যখন তিনি হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানুয়ারিতে হাসপাতালে থাকার বিষয়টি জানাতে ব্যর্থ হন। সহকারী ক্যাথলিন হিকসকে তাঁর কিছু দায়িত্ব গ্রহণ করতে বলা হলেও তাকে অস্টিনের হাসপাতালে থাকার বিষয়টি জানানো হয়নি।
পেন্টাগনের প্রেস সচিব বিমান বাহিনীর মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে অস্টিন কেন তাঁর রোগের কথা আগে জানাননি সেই ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেন নি।
তিনি বলেন, "আমার কাছে এই ব্যাপারে বিশেষ কোনো তথ্য নেই কিন্তু ক্যান্সার ধরা পরার বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত।
পেন্টাগনের ভাষ্যমতে একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মীর জ্বর থাকার কারণে এই রকম বড় ভুল হয়েছে।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের 'চিফ অফ স্টাফ' জেফ জিয়েন্টস রাষ্ট্রপতির মন্ত্রিসভার সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে না পারলে আগে থেকেই নোটিশ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
দেশটির শীর্ষ সামরিক হাসপাতাল ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরা মঙ্গলবার অস্টিনের রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রথম সম্পূর্ণ টাইমলাইন প্রদান করেন।
ডা. জন ম্যাডক্স জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাঁর "প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পরে এবং এর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল।"
২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর দেশটির সর্বোচ্চ সামরিক হাসপাতালে অস্টিনকে ক্যান্সার অপসারণের জন্য ভর্তি করা হয়। এর জন্য তাঁকে সাধারণ এনেস্থেশিয়া দেয়া হয়।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি তিনি আবার ওয়াল্টার রিডে ভর্তি হন অস্ত্রোপচার পরবর্তী জটিলতা নিয়ে। পর্যবেক্ষণের পর তাঁর মূত্রনালিতে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাঁকে পরের দিন নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে আরও চিকিৎসার জন্য রাখা হয়।
ম্যাডক্স বলেন, "পাশাপাশি তাঁর পেটে তরল পদার্থ জমা হয় যেটি তাঁর ক্ষুদ্রান্তের কাজকে ব্যাহত করছিলো।"
ডা. ম্যাডক্স এবং ডা. চেস্টনাট বলেন, "জানুয়ারিতে হাসপাতালে থাকার সময় তিনি কখনোই জ্ঞান হারাননি এবং তাঁকে কখনোই সাধারণ এনেস্থেশিয়া দেওয়া হয়নি।"
ডাক্তাররা লিখেছেন অস্টিনের সংক্রমণ ভালো হয়ে গেছে এবং "তিনি এখন সেরে উঠছেন যদিও এতে সময় লাগবে।"
প্রতিবছর অনেক আমেরিকান প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্যমতে, প্রতি ৮ জনে একজন আমেরিকান পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হন।
এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি আফ্রিকান আমেরিকান পুরুষদের। 'সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোলের' তথ্যমতে, আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রোস্টেট ক্যান্সারে মারা যাওয়ার হার দ্বিগুণ।"
মূলত অস্টিনকে গত সোমবার ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে তার হাসপাতালে ভর্তির এই খবরটি তিনদিন গোপন রেখেছিল পেন্টাগন। পেন্টাগন থেকে বলা হয়, চিকিৎসা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথা ভেবে সংবাদটি গত কয়েকদিন গণমাধ্যমে প্রদান করা হয়নি।