মহামারীতে প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপে কেন দূতাবাস খুলেছে চীন
কোভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, মুখ থুবড়ে পড়ছে, তখন বেইজিং থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে এক ছোট্ট দ্বীপে লাল পতাকা উড়িয়ে দূতাবাস খুলে বসেছে চীন।
মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের কিরিবাতি দ্বীপের জনসংখ্যা মাত্র ১ লাখ ১৬ হাজার। বিশ্বের তিনটি দেশের দূতাবাস আছে দ্বীপটিতে- অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর কিউবা। এবার এখানে চীনের দূতাবাসও স্থাপিত হলো।
কিন্তু কেন?
এই ছোট্ট দ্বীপটিই ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে চলেছে।
গত সেপ্টেম্বরে, দ্বীপটি তাইপেই থেকে বেইজিংয়ে কূটনৈতিক স্বীকৃতি সরিয়ে নিয়েছে। চীন তাইওয়ানের স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপটিকে একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসাবে বিবেচনা করে।
এদিকে আবার গত সপ্তাহে কিরিবাতির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাইওয়ান-পন্থী প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন বেইজিং-পন্থী তেনেতি মামাউ।
অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ার সাম্প্রতিক নিদর্শন এই কিরিবাতি দ্বীপ।
প্রশান্ত মহাসাগরের প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই দ্বীপগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জলপথগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তারা।
এতদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই ছবির মতো সুন্দর দ্বীপগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া এই অঞ্চলের দাতাদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু সম্প্রতি চীনের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষমতার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, ফলে অধিকাংশ দ্বীপ রাষ্ট্রই চীনের দিকে ঝুঁকেছে।
মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোভিড-১৯ নিয়ে বেকায়দায় পড়ে গেছিল চীন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মিটিং এর কয়েকদিন আগেই চীনের নেতৃত্বে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১০ দ্বীপরাষ্ট্রের মন্ত্রীরা এক ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেয়।
এইসমস্ত অঞ্চলে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চীনের সহযোগিতার উজ্জ্বল প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে শেষ হয় মিটিং।
এই মিটিঙের পর অংশগ্রহণ করা দ্বীপগুলোর পক্ষ থেকে একটি যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তাতে চীন সম্পর্কে লেখা ছিল- 'করোনা পরিস্থিতিতে দেশটি সময়োপযোগী ও শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আর এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত, স্বচ্ছ এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছে বিশ্ববাসীর সঙ্গে'।
ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডেংহুয়া ঝ্যাং বলেন, 'ব্যস, এটাই দরকার ছিল চীনের। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের এই সুযোগসন্ধানী পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ- যত বেশি প্রভাব খাটাতে পারবে, তত শক্তিশালী অবস্থআনে থেকে বিশ্ব দরবারে কথা বলতে পারবে সে।'
কেননা মহামারীর শুরু থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন বারবার চীনকে দোষ দিয়েছে। অন্যদিকে ভাইরাসটির উৎস সম্পর্কে স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করার কথা বলে চীনকে রীতিমতো ক্ষুব্ধ করে তুলে অস্ট্রেলিয়া।