সোমবার সন্ধ্যার পরে সীমান্তজুড়ে গোলাগুলি বেড়েছে, আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ছেন শত শত মানুষ
মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মধ্যে দেশটির সীমান্তবর্তী এলাকা বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় দুজন নিহত হওয়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্রমশ আতঙ্ক বাড়ছে। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকে সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা বেড়ে চলছে। স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ির মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে সরতে শুরু করেছেন।
গত তিন দিনের সংঘাতের সীমান্ত-লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় গুলি বা মর্টার শেষ পড়লেও সোমবার দুপুরে মৃত্যুর ঘটনা পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। ঘটনার পর থেকে ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে সরতে শুরু করেছেন।
ঘুমধুম মৈত্রি সড়কের পাশে অবস্থিত নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের এখানে অনেক বেশি গোলাগুলি চলছে। বিশেষ করে, সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে গোলাগুলির মুহুর্মুহু শব্দ শোনা যাচ্ছে। গুলি এসে বাড়িঘরে পড়েছে। এজন্য পরিবার নিয়ে আমরা এলাকা ছেড়েছি।"
স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "গত তিন দিন আমার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তেমন ঝামেলা হয়নি। তবে আজ সন্ধ্যার পর থেকে অবস্থা বেশি খারাপ। মানুষজন যে যার মতো নিরাপদে চলে গেছে। সরকারিভাবে কোন নির্দেশনা না থাকায়- স্থানীয়দের সরাতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।"
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ টিবিএসকে বলেন, "ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সবগুলো এলাকার বসত-বাড়ি থেকে মানুষ চলে গেছেন। বাড়ি-ঘর পাহারা দিতে একজন করে পুরুষ থাকছেন।"
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে ঢেঁকিবনিয়ার পাশে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তুমব্রু রাইট ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সঙ্গে গোলাগুলি শুরু হয়। তুমব্রু রাইট ক্যাম্প সীমান্তচৌকিটি বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলার লোকালয়ের একদম কাছাকাছি।
ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি থেকে বাংলাদেশের লোকালয় প্রায় ৮০০ মিটার দূরে। ঢেঁকিবনিয়া ও ঘুমধুমের মাঝখানে নাফ নদীর সরু একটি শাখা ও প্যারাবন রয়েছে। এ কারণে তুমব্রু রাইট ক্যাম্পে গোলাগুলির সময় বাংলাদেশের বসতঘরে গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে। শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া সংঘাত এখনও চলছে। এরমধ্যে বাংলাদেশে রোববার তিন জন আহত হয়েছেন। সোমবার দুজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। সীমান্ত-লাগায়ো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারের গণমাধ্যম- দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদন অনুসারে, গত তিন দিনে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বেশিরভাগ ঘাঁটি আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে। এপর্যন্ত সংঘাতে জান্তা বাহিনীর অন্তত ৬২ জন সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এবং সশস্ত্র সংগঠনগুলো মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চল ও রাজ্য, সাগাইং, মগওয়ে এবং মান্দালয় অঞ্চলের পাশাপাশি কাচিন ও কারেন রাজ্যে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে তাদের হামলা জোরদার করার কারণে এই হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির তথ্যমতে, গত দুদিনে আরকান আর্মির হামলা থেকে বাঁচতে এপর্যন্ত ১০৬ জন বিজিপি সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের অস্ত্রশস্ত্র জমা নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিজিবি। এরমধ্যে গুরুতর আহত চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন দিনের সংঘাতে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও- আনুষ্ঠানিকভাবে কোন ব্যবস্থা বা নির্দেশনা আসেনি। সীমান্ত এলাকার লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নিজ উদ্যোগে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন। সরকারিভাবে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় মানুষ।
গোলাগুলি চলাকালে সোমবার রাত ১২টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মান্নানের কাছে সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।