ডিসেম্বরের পর অফশোর ঋণের সুদে কর অব্যাহতি সুবিধা থাকবে না: এনবিআর
অফশোর ঋণের সুদের ওপর করছাড়ের সুবিধা আগামী ডিসেম্বরের পর আর থাকবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে প্রাক বাজেট সভায় তিনি বলেন, 'আপনারা (যারা অফশোর লোন নেন) প্রস্তুতি নিন। ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা একটা ব্রিদিং স্পেস দিয়েছি। এরপর আর এ সুযোগ থাকবে না। সেভাবে নেগোসিয়েশন শুরু করুন।'
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে এনবিআর ওই সভার আয়োজন করে। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, 'আমরা তো ট্যাক্স হ্যাভেন হতে পারি না। কারণ আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছি।'
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর জুলাই থেকে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপ করেছিল। ফলে ব্যবসাগুলি নতুন ঋণ গ্রহণের দিকে কম ঝুঁকে পড়ে। এতে করে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ হ্রাস পায়। অন্যদিকে ব্যবসাগুলি বিদ্যমান ঋণ পরিশোধের উপর বেশি গুরুত্ব দিতে থাকলে এতে করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসে সেটি প্রভাব রাখে।
এই ট্যাক্স মূলত অফশোর ব্যাংকের সুদের উপর প্রযোজ্য। ফলে এর প্রভাব স্থানীয়ভাবে যারা লোন নিচ্ছিলেন, তাদের উপর পড়ার কথা নয়। কিন্তু ব্যাংক সূত্র জানায়, বিদেশি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এই লোকসান স্থানীয়ভাবে যারা লোন নেন পরোক্ষভাবে তাদের উপর চাপিয়ে দিতে শুরু করে।
এরপর বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে দেনদরবার শুরু হওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই ট্যাক্স থেকে এক্সেম্পশন দেয় এনবিআর। এই এক্সেম্পশন সুবিধা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এনবিআর সূত্র জানায়, ডলারের ফ্লো বাড়াতে উৎসাহিত করার জন্য এনবিআর এ সুবিধা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছিল। গতকালের আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান ঋণের ইন্টারেস্টের ট্যাক্সের চাপ ঋণ গ্রহীতার উপর চাপানোর জন্য এই পক্ষের নেগোসিয়েশনের দুর্বলতাকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, "যাদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়, তাদের প্রায় সব দেশের সঙ্গে আমাদের ডাবল ট্যাক্সেশন অ্যাভয়েডেনস অ্যাগ্রিমেন্ট (ডিটিএএ) রয়েছে। ফলে এখানে ট্যাক্স দিলে তা ওই দেশে দিতে হবে না। কিন্তু এ বিষয়গুলো আমাদের এখান থেকে সঠিকভাবে নেগোশিয়েট করতে পারে না।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, গত অক্টোবর শেষে স্বল্পমেয়াদি বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১২.১৩ বিলিয়ন ডলারে। আর জুনের শেষে এটি ছিল ১৩.৬৬ বিলিয়ন ডলার।
সভায় বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথোরিটির (বেপজা) পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স সুবিধা চাওয়া হয়। এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বেপজা, বেজা'র অধীনের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া সুবিধার অপব্যবহারের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "আমাদের বলা হয় অপব্যবহার হবে না। কিন্তু যখন প্রমাণ আসে অপব্যবহারের, তখন মন ভেঙ্গে যায়। তখন বেশি সুবিধা দিয়ে আরও বেশি রিস্ক নিতে পারি না।"
সভায় বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন।
একই দিন অপর সভায় বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই), ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই), উইমেন এন্টারপ্রেনারস নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউইএনডি), অ্যান্টি-টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সসহ (এটিএমএ) সহ আরও কিছু সংস্থা তাদের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরে।
বিসিসিসিআই-এর উপদেষ্টা খোরশেদ আলম স্থানীয়ভাবে ইয়ার্ন বিক্রয়ে প্রতি কেজিতে ৩ টাকা ভ্যাট এর বাইরে ২ শতাংশ অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) কমিয়ে ০.২৫ করার প্রস্তাব দেন। এছাড়া একই সংগঠন থেকে কমপ্লিট নক ডাউন (সিকেডি) ও কমপ্লিট বিলট ইউনিটস (সিবিইউ) বিক্রির ক্ষেত্রে ট্যাক্সের ডিফারেন্স ৫০ শতাংশ রাখা, সিকেডি নীতিমালা রিভিউ করা, ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যালকে উৎসাহিত করতে এনবিআরের উদ্যোগ চাওয়া হয়।
আর এটিএমএ বিভিন্ন ধরনের টোব্যাকো পণ্যের মূল্যস্তর বাড়ানো, শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করে। যার মাধ্যমে বাড়তি ৯৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে বলে জানানো হয়।