বইমেলায় মোহাম্মদ সলিমুল্লাহর ‘মাস্টার অব ফরেন এক্সচেঞ্জ’
দেশে কয়েক হাজার ব্যাংকার বিদেশি বাণিজ্য নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু বিদেশি বাণিজ্য নিয়ে বাংলা ভাষায় রচিত ট্রেড বিজনেস নিয়ে বই সেই অর্থে নেই বললেই চলে। এই বিষয়টিকে লক্ষ্য রেখে বাংলা ভাষায় বিদেশি বাণিজ্যের খুঁটিনাটি বিষয়ে 'মাস্টার অব ফরেন এক্সচেঞ্জ' নামে বই লিখেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ। অমর একুশে বইমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে দাঁড়িকমা প্রকাশনী। অমর একুশে বইমেলায় দাঁড়িকমা প্রকাশনী স্টল নম্বর ৯৪ (ঢাকা) ও স্টল নম্বর ৫১-৫২ (চট্টগ্রাম) পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বইমেলা থেকে ২৫ শতাংশ এবং শিক্ষার্থীরা ৩০ শতাংশ ছাড়ে সংগ্রহ করতে পারবেন বইটি।
লেখক মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ক্যারিয়ারে তিনি বৈদেশিক বাণিজ্য ও ব্যাংক পরিদর্শন বিষয়ে বেশ সুনাম ও দক্ষতা অর্জন করেছেন। বৈদেশিক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রকীয় বিধান এবং পরিদর্শনের কলাকৌশল বিষয়ে তাঁর লিখিত ৩টি হ্যান্ডবুক সহকর্মীদের নিকটে গৃহীত ও অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছে। সেই প্রেরণা থেকেই বিদেশি বাণিজ্য নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে বইয়ের লেখক মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ বলেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের জন্য বাংলা ভাষায় পরিপূর্ণ কোনো বই নেই। পূর্ণাঙ্গ সমাধানের কোন বই না থাকায় কাজের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ কাস্টমস ও সিসিআইএন্ডই এর ইস্যুকৃত বিধানা আর ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এর প্রদত্ত বিবিধ নির্দেশনার আলোকে এদেশে আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করতে পারাটা দুরূহ। ডাইজেস্ট আকারে বৈদেশিক বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বৈদেশিক ইন্স্যুরেন্স, লাগেজ-ব্যাগেজ প্রভৃতি বিষয়ে কোনো সমাধান প্রস্তুত করা হয়নি। এজন্য এ দেশে ফরেন এক্সচেঞ্জ নিয়ে খুব বেশি বিশেষজ্ঞও তৈরি হন না।
তিনি আরো বলেন, "আমি কাজ করতে গিয়ে ১৮৯৯ সাল থেকে অদ্যাবধি সকল আইন ও বিধান সংগ্রহ করেছি। আমার দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতা ও আমার অধ্যয়নের মিশেলে এই বইটি লিখতে চেষ্টা করেছি। আশাকরি ফরেন এক্সচেঞ্জ নিয়ে যারা কাজ করছেন বা করতে চান এই বই তাঁদের জন্য সহযোগী হবে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতে যারা বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগে কাজ করেন বইটি তাদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।"
মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ জানিয়েছেন, বইটি পড়ে পাঠক যা জানতে পারবেন: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালিত হয় ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) এর প্রণীত বিবিধ বিধান (UCP, ISBP, URR, URG, ISP ইত্যাদি) অনুসারে। সমস্যা হলো, ওই সকল বিধান অনাবশ্যক জটিল ইংরেজিতে লিখিত, যা এ দেশের অধিকাংশ মানুষের নিকট দুর্বোধ্য।
তিনি বলেছেন, এই দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সংক্রান্ত কার্যক্রম বেশ কয়েকটি আইনের অধীনে পরিচালিত হয়। ওই সকল আইনের অধীনে কয়েকটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাও কাজ করে। এ সকল প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণীত আদেশ, বিধি, নীতি, প্রজ্ঞাপন, নির্দেশিকা দ্বারা বৈদেশিক বাণিজ্য বিভিন্ন মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু এ সকল দেশি ও বিদেশি বিধি-বিধানের কোনো সমন্বিত বই নেই। ফলে, আমদানি ও রপ্তানিকারক এবং বিদেশগামী ও প্রত্যাগত যাত্রীগণের সর্বদা অনিশ্চিত বাস্তবতার মাঝে থাকতে হয়। একই সাথে, ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার-সহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থা যদিও সঠিক সেবা প্রদান করে থাকে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আইন বা বিধানের সঠিক নির্দেশনা না জানায় বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যায় পড়তে হয়।
সলিমুল্লাহ বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন ওই সকল নবীন উদ্যোক্তা বা পেশাদার ব্যক্তিবর্গ, যারা এই কাজে নতুন করে যুক্ত হন এবং কাজ শিখতে চেষ্টা করেন। তাদের জন্য কোনো সহজ সমাধান নেই। এই বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে 'মাস্টার অব ফরেন এক্সচেঞ্জ' বইটি লেখা হয়েছে।
লেখকের সাহিত্যিক দক্ষতার অভাবে বইটির গদ্যরূপ বা বর্ণনশৈলী আকর্ষণীয় হয়নি বটে, তবে এটি বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমের সকল প্রশ্নের সমাধান দেবে মর্মে বিশ্বাস করেন প্রকাশক।