গাজার উত্তরাঞ্চলের শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস জানিয়েছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলের শিশুরা না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে তিনি এই ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, খাদ্যের অভাবে ১০ জন শিশু মারা গেছে ও 'তারা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে' এবং হাসপাতাল ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার জানিয়েছে, কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে অন্তত ১৫ শিশু মারা গেছে।
ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা সোমবার জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের একটি হাসপাতালে রবিবার (৩ মার্চ) পর্যন্ত ষোল শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ডা. টেড্রোস রিপোর্ট করেছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে "অতিরিক্ত অপুষ্টির হার, শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে, জ্বালানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহের গুরুতর ঘাটতি, হাসপাতাল ভবন ধ্বংস হয়েছে" এবং সেখানে আনুমানিক ৩ লাখ মানুষ সামান্য খাবার অথবা বিশুদ্ধ পানি নিয়ে বসবাস করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্সে (পূর্বের টুইটার) দেওয়া ওই পোস্টে তিনি আরও বলেছেন, "গাজার উত্তরাঞ্চলে আরও নিয়মিত যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করা সত্ত্বেও গত কয়েক মাসের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম সফর ছিল এটি। আল-আওদা হাসপাতালের পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ এবং সেখানকার একটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।"
এদিকে গত সপ্তাহেই জাতিসংঘ গাজায় দুর্ভিক্ষ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছিল।
জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছিলেন, গাজা উপত্যকা জুড়ে কমপক্ষে ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ (জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ) ভয়াবহ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে এবং উত্তরাঞ্চলে দুই বছরের কম বয়সী ছয় শিশুর মধ্যে একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক বলেছেন, "আমরা যে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলাম তা এখানে চলমান। অপুষ্টির জন্য গাজা উপত্যকা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।"
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক অ্যাডেল খোদর এক বিবৃতিতে বলেছেন, "গাজার অবশিষ্ট যে কয়টি হাসপাতাল চালু আছে সেগুলোতে সম্ভবত আরও বেশি শিশু জীবন বাঁচানোর জন্য লড়াই করছে এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে সম্ভবত আরও বেশি শিশু ঠিকঠাক যত্ন ও সেবা পাচ্ছে না।"
তিনি আরও বলেছেন, "এই মর্মান্তিক এবং ভয়াবহ মৃত্যু মানবসৃষ্ট এবং এটি সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য।"
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫৩ জনকে গাজায় আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে অভিহিত করেছে।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের চলমান আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৫০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়