বিপদে পড়েছি মা, ক্ষমা করে দিও, কী হবে জানি না: জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার তৌফিক
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকাল ৫টা ৮ মিনিটে পরিবারের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় তৌফিক ইসলামের। তিনি ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার।
মায়ের সঙ্গে শেষ কথোপকথনের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন তৌফিক। বলেছিলেন, 'বিপদে পড়েছি মা, ক্ষমা করে দিও। পরবর্তীতে কী হবে জানি না।'
তৌফিক ইসলামের বাড়ি খুলনা শহরের সোনডাঙ্গা থানাধীন করিম নগরে। আজ বুধবার দুপুরে তার বাড়িতে মা দিল আফরোজার সঙ্গে কথা হয়।
তিনি বলেন, 'গতকাল (মঙ্গলবার) বিকালে ছেলে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে কান্নাকাটি করছিল। আমাদের কাছে দোয়া চাচ্ছিল। বার বার ক্ষমাও চাচ্ছিল। আমি তাকে নানা দোয়া পড়তে অনুরোধ করি। একপর্যায়ে সে আমাকে মা বলে ডাক দিলে, সাড়া দেওয়ার আগেই ঠিক (বুঝতে পারি) পাই, কে যেন তার ফোনটি কেড়ে নিয়েছে। তার পর থেকে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।'
বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাচ্ছিল। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন।
কেএসআরএম গ্রুপের এই জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লিমিটেড।
তৌফিকের স্ত্রী জোবাইদা নোমান বলেন, 'দুপুর ২টার দিকে একবার কল দিয়ে জানিয়েছিলেন যে তাদের জাহাজে জলদস্যুরা আক্রমণ করেছে। পরবর্তী সময়ে কি হবে কিছুই বলতে পারছেন না। তখন তিনি মা-বাবাকে না জানাতে অনুরোধ করেছিলেন। তবে পরে জানিয়েছিলাম। বিকাল ৫টার দিকে আরেকবার কল দিয়ে জানান জলদস্যুরা তাদের জিম্মি করেছে, সবাইকে ব্রিজ রুমে আটকে রাখছে। এর কিছুক্ষণ পর আবার জানান, জলদস্যুরা জাহাজসহ তাদের সোমালিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে।'
তৌফিকের দুই সন্তান। আসফিয়া তাহসিম (৭) ও আহমদ রুসাফি (৫)। ঘটনার পর থেকে তার জন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্বজনরা।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর ওই জাহাজে যোগ দেন তৌফিক। চলতি বছরের কোরবানির ইদের আগে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তার জিম্মির খবরে বাড়িতে নিস্তদ্ধতা নেমে এসেছে।
জোবাইদা নোমান বলেন, 'কান্নারত অবস্থায় আমার স্বামী বলেছিলেন, আমাকে ক্ষমা করে দিও। জলদস্যুরা আমাদের কী করবে বলতে পারছি না। ঘটনা জানার পরে আমাদের মেয়েটি বার বার কান্না করছে। ছোট ছেলেটি এখনো সেই বুঝ আসেনি।'
তৌফিকের পরিবারের সদস্যরা জাহাজটির মালিক কেএসআরএম গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছেন।
২০০৮ সালে ক্যাডেট হিসেবে জাহাজে চাকরি নেন তৌফিক। ২০২৩ সালে চিফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে এখনও পদোন্নতি পাননি। বর্তমানে তিনি সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।