নদী ভাঙনে রংপুরের চরাঞ্চলের মানুষ দিশেহারা
বুধবার সন্ধ্যা। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। পিনপতন নীরবতার মধ্যে ভেসে আসছে মানুষের আর্তনাদ। শোনা যাচ্ছে, 'আল্লাহ রক্ষা করো, নদীতে সব ভেসে গেছে', 'আমাদের উপর এত অবিচার কেন', 'পরিবার নিয়ে কই যাব, কোথায় থাকব' এমন কিছু বাক্য।
বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকার শত শত মানুষকে রাস্তায় বসে কান্না করতে দেখা গেছে। সবার মুখে একটাই কথা- 'আমাদের সব শেষ, নদী ভেসে গেছে ঘর-বাড়ি, ফসল সব'।
কয়দিন আগেও ঘর ছিল রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওয়ালা পূর্ব হাগুরিয়া গ্রামের আমেনা বেগমের (৭৫)। পরিবার নিয়ে ভালোই কাটছিল দিন। কিন্তু হঠাৎ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তার ঘর। ভিটেমাটি হারিয়ে পাগলপ্রায় আমেনা বেগম বলেন, এখন আমরা রাস্তায় থাকি। বুধবার রাতে আমার সব কেড়েছে সর্বনাশা তিস্তা।
''এখন আমার আর কিছুই নেই। গরীবের কপালে ভালো কিছু হয় না। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা নাম লিখে নিয়ে গেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ সহযোগীতা করেনি'', বললেন আমেনা বেগম।
তিস্তার ভাঙনে সর্বশান্ত হয়েছেন আমেনা বেগমের মতো শতশত পরিবার। ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে হারানোর পর তারা এখন বাস করছেন রাস্তায়। বন্যার পানি কমার পর থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে তাদের আজ এমন দুরাবস্থা।
একই এলাকার রেজাউল করিম। পাঁচ শতক জমিতে তিন সন্তান নিয়ে বাস করতেন। নদীর কড়াল গ্রাসে বীলিন হয়েছে তার শেষ সম্বলটুকু। এখন পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। তবে এ যুদ্ধে হারতে রাজি নন রেজাউল। বাঁচতে চান সংগ্রাম করে।
পীরগাছার দক্ষিণ গাবুরা গ্রামের ৭২ বছর বয়সী সিকেন্দার আলীরও একই অবস্থা। ২০ শতক জায়গা নিয়ে বানানো বাড়ি ও ফসলি জমি চলে গেছে তিস্তার পেটে। এখন পরিবার নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তার মতো অবস্থা ওই চরাঞ্চলের হাজারো মানুষের।
উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি কমতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। নদীর গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের হাজারো মানুষের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, এ বছর উত্তরাঞ্চলের বন্যায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের জন্য সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, বন্যার পানি কমতে থাকায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, তারাগঞ্জ ও পীরগাছায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে ওই অঞ্চলের ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।