দেশে এক বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারি ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে: বিবিএস
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এক বছরে সিজারিয়ান ডেলিভারি ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। রবিবার (২৪ মার্চ) বিবিএসের প্রকাশিত 'বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স- ২০২৩'-শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দেশে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ছিল ৫০.৭% এবং ২০২২ সালে এ হার ছিল ৪১.৪%।
বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, স্বাভাবিক প্রসবের হার অনেক কমেছে। ২০২৩ সালে দেশে স্বাভাবিক প্রসবের হার ছিল ৪৯.৩%, এক বছর আগে যা ছিল ৫৮.৬%।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে শহরে ৫৯.১% শিশুর জন্ম হয়েছে, এর আগের বছর যা ছিল ৫৩%।
এছাড়া, হাসপাতালে সন্তান প্রসবের হার বেড়েছে। ২০২৩ সালে ৩২.৭৭% সন্তান জন্ম হয়েছে বাড়িতে, ২০২২ সালে যা ছিল ৪২.৩১%।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের (এসভিআরএস) প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, '২০২৩ সালে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার বেড়ে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে, এটি উদ্বেগজনক।'
তিনি আরও বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।'
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, একটি দেশে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ১০-১৫% ছাড়িয়ে গেলেই তা উদ্বেগজনক।
এ প্রসঙ্গে অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. ফেরদৌস বেগম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, 'সন্তান জন্মদান একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এটিকে অস্বাভাবিক বানানোর সুযোগ নেই। সিজারিয়ান সেকশন একটি প্রয়োজনীয় অপারেশন, যার মাধ্যমে মা ও শিশুর জীবন রক্ষা করা হয়। এটি কোনো নরমাল প্রক্রিয়া না, এটি একটি মেজর অপারেশন। সিজারিয়ান ডেলিভারিতে প্রসূতির রক্তক্ষরণের শঙ্কা আছে। এমনকি তার শারীরিক ও মানসিক নানা ধরনের ট্রমাও হতে পারে।'
নরমাল ডেলিভারির বিষয়ে রোগীদের কাউন্সিলিংয়ের অভাবেও সিজারিয়ান ডেলিভারি বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'সিজারিয়ান সেকশন এক ধরনের স্বাভাবিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। রোগীরা ভয় পায় নরমাল ডেলিভারিতে কোনো সমস্যা হবে কিনা। আমাদের এখানে কোনো কাউন্সেলিং হয়না। আমাদের কোনো হাসপাতালের কাউন্সিলরের পদ নেই। নরমাল ডেলিভারির বিষয়ে মানুষকে বোঝানো হয়না। অথচ গর্ভাবস্থার প্রথম থেকে বোঝানো দরকার এভাবে চলো, ব্যায়াম করো, নরমাল ডেলিভারি করার চেষ্টা করো, না হলে পরে সিজারিয়ান ডেলিভারি করা যাবে।'
ডা. ফেরদৌস বেগম বলেন, 'গর্ভাবস্থা একটি অনিশ্চিত অবস্থা। হঠাৎ মা ও শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে। রোগী হঠাৎ অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা শুরুর জন্য যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়, আমাদের অধিকাংশ হাসপাতালে তা নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া একজন রোগীর জন্য একজন নার্স এবং একজন মিডওয়াইফ প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের এখানে ১০০ জনেও একজন নার্স ও মিডওয়াইফ নেই। প্রয়োজনীয় জনবলের ঘাটতি অনেক বেশি। নার্স ও মিডওয়াইফের কাজ মনিটর করা। মনিটর করার লোক না থাকায় ডাক্তারেরা রিস্ক নিতে চায়না।'