দেশে করোনায় ধূমপায়ীদের মৃত্যুর হার তিনগুণ বেশি: গবেষণা
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির সময় অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ী রোগীদের মৃত্যুর হার ৩ গুণ বেশি ছিল, এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি রোগীর।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের "দ্য রিলেশনশিপ বিটুইন স্মোকিং অ্যান্ড কোভিড-১৯ আউটকামস ইন টার্মস অব মরবিডিটি অ্যান্ড মর্টালিটি ইন বাংলাদেশ" শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারিতে ধূমপায়ীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ৬.৬ শতাংশ, ধোঁয়াবিহীন তামাক বা এসএলটি (জর্দা-গুল-সাদা পাতা) ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪.৪ শতাংশ এবং অধূমপায়ীদের মধ্যে ২.১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের "স্বাস্থ্য বাতায়ন কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিস সেন্টার"-এ ১২ জুন ২০২০ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত এক লাখ ২৭ হাজার ৭১ জন সেবাগ্রহীতার মধ্যে এক হাজার ৬০৭ জনের উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।
ধূমপান, পরোক্ষ ধূমপান এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকের সাথে কোভিড-১৯'র মৃত্যুহার এবং অসুস্থতার সম্পর্ক নিরূপণে পরিচালিত গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ।
ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া ধূমপায়ী রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল– অধূমপায়ীদের থেকে ৭৩ শতাংশ বেশি এবং ধূমপান ছেড়ে দেয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ এরও বেশি, এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল ৩৬ শতাংশ বেশি।
তিনি আরো জানান গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, কোভিড-১৯ এর উচ্চ মৃত্যুহারের সাথে সম্পর্কিত কারণগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস মেলিটাস (টাইপ-২), হাইপার টেনশন, কিডনির সমস্যা, নিদ্রাহীনতা এবং কার্ডিওভাসকুলারসহ অন্যান্য সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়।
গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র এবং গণপরিবহনকে ১০০ ভাগ ধূমপানমুক্ত রাখা; কার্যকর করারোপের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধি করে তামাকপণ্য তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে রাখা; তামাকের যেকোনো প্রচারণা নিষিদ্ধ করাসহ বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারাকে শক্তিশালী করে তামাকের বিস্তার রোধ করা জরুরী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, 'তামাকের ভয়াবহতা রুখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নানান গবেষণা ও পরিসংখ্যান দিয়ে আমরা সহজেই বুঝতে পারি তামাক আমাদের জন্য কত ক্ষতিকর।'
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, তামাকের ভয়াবহতা রুখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। নানান গবেষণা ও পরিসংখ্যান দিয়ে আমরা সহজেই বুঝতে পারি তামাক আমাদের জন্য কত ক্ষতিকর।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, 'তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সংসদ সদস্যরা সবাই সবার জায়গা থেকে কাজ করেছেন। করোনার সাথে ধূমপানের সম্পর্ক নিরূপণে যে গবেষণা করা হয়েছে– তার ফলাফলে আমরা শঙ্কিত।'