গাঁজা সেবনের অনুমতি দিল জার্মানি, তবে আছে কিছু বাধ্যবাধকতা
ইউরোপের তৃতীয় দেশ হিসেবে ১ এপ্রিল (রবিবার) গাঁজা সেবনকে আংশিক বৈধ করল জার্মানি। এ আইনের আওতায় জার্মানিতে অবস্থানরত ১৮ বছরের বেশি বয়সি ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট পরিমাণ গাঁজা রাখতে ও সেবন করতে পারবেন। খবর বিবিসির।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) জার্মানির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগে তুমুল তর্ক-বিতর্কের পর অবশেষে ৪০৭-২২৬ ভোটে গাঁজাকে বৈধতা দেওয়ার আইন পাশ হয়। নতুন এ আইন দুই ধাপে ১ এপ্রিল ও ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
'কিছু জার্মান লোক কাজের পরে তাদের বিয়ার পান করে। আমরা শুধু আমাদের গাঁজা সেবন করতে চাই', গাঁজা বৈধ হওয়ার পর খুশিতে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন মার্সেল রিটশেল। জার্মানির নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর শত শত মানুষ বার্লিনে উদযাপন করেছেন।
গাঁজাকে বৈধতা দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে জার্মানিতে অনেক বছর ধরেই তর্ক-বিতর্ক চলছে। চিকিৎসকরা তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। আর রক্ষণশীলরা বলছেন, গাঁজা বহন ও সেবন বৈধ করার ফলে মাদকের ব্যবহার বাড়বে।
জার্মানিতে ইতিমধ্যে বার্লিনের মতো অনেক জায়গায় প্রকাশ্যে গাঁজাসেবন করলেও পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে। যদিও দেশটিতে বিনোদনের উদ্দেশ্যে মাদক বহন করা অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লটারবাখ বলছেন, বিদ্যমান আইন সত্ত্বেও অনেক বছর ধরেই জার্মানির তরুণদের মধ্যে গঞ্জিকাসেবন লক্ষণীয়ভাবে বাড়ছে।
নতুন এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য, কালোবাজারকে দমানো, ধূমপায়ীদের ভেজাল গাঁজা থেকে রক্ষা করা এবং সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের আয়ের উৎস কমানো।
১ এপ্রিল থেকে যেসব নিয়ম কার্যকর
১ এপ্রিল থেকে এ আইনের আওতায় প্রাপ্তবয়স্করা সর্বোচ্চ ২৫ গ্রাম পর্যন্ত গাঁজা সঙ্গে রাখার পাশাপাশি বাড়িতে সর্বাধিক তিনটি গাছ লাগাতে পারবে। এছাড়া একজন প্রাপ্তবয়স্ক নিজ ঘরে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম গাঁজা রাখতে পারবে। তবে সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে স্কুল, ক্রীড়া কেন্দ্র বা পথচারী অঞ্চল এর মধ্যে মানুষেরা একসঙ্গে গাঁজা সেবন করার অনুমতি পাবে না।
১ জুলাই থেকে যেসব নিয়ম কার্যকর
নতুন আইন অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে দেশটিতে 'গাঁজা ক্লাবের' মাধ্যমে বৈধভাবে গাঁজা পাওয়া সম্ভব হবে। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান ও ফার্মেসিতে গাঁজা বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু এতে মাদকটির রপ্তানি বেড়ে যেতে পারে বলে ইইউ উদ্বেগ প্রকাশ করলে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।
এখন 'ক্যানাবিস সোশ্যাল ক্লাবস' নামক অবাণিজ্যিক সদস্যদের ক্লাবগুলো সীমিত পরিমাণে গাঁজা উৎপাদন ও বিপণন করবে। প্রতি ক্লাবে সর্বোচ্চ ৫০০ জন সদস্য থাকবে। সদস্যপদ পাবেন শুধু জার্মান নাগরিকেরা।
রক্ষণশীল বিরোধীদল সিডিইউ-এর সিমোন বোরখার্দ বলেছেন, চিকিৎসক, পুলিশ ও সাইকোথেরাপিস্টদের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সরকার 'একেবারে অপ্রয়োজনীয়, বিভ্রান্তিকর' এই আইন পাশ করেছে। তারা বলছে, আগামী বছর তারা ক্ষমতায় গেলে এ আইন পুরোপুরি বাতিল করবে।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, গত দশ বছরে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সি গাঁজাসেবনকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ আইন কালোবাজারকে নির্মূল করবে।