নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুলকে অব্যাহতি দিলো ডেইলি স্টার
'ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী' ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এটির নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হককে অব্যাহতি দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে অব্যাহতির বিষয়ে একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়। নোটিশটি অবিলম্বে কার্যকর গণ্য হবে বলে সেখানে জানানো হয়।
সৈয়দ আশফাকুলকে অব্যাহতি দেওয়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি পত্রিকাটির পক্ষ থেকে। তবে নিজের বাসা থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলায় বর্তমানে তিনি সস্ত্রীক কারাগারে রয়েছেন।
গত ২১ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এক শুনানি শেষে আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের জামিন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসার সাহায্যকারী ১৫ বছর বয়সি প্রীতি উরাং নয়তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওইদিন গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সৈয়দ আশফাকুল, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার ও তাদের দুই সন্তানকে আটক করে পুলিশ। পরে সন্তানদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি নিহতের বাবা লোকেশ উরাং বাদী হয়ে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় পেনাল কোডের ৩০৪(ক) ধারায় মামলা করেন বলে সে সময় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (মোহাম্মদপুর জোন) আজিজুল হক।
পেনাল কোডের ওই ধারা অনুযায়ী, কারও বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত কারণে যদি কেউ মারা যান বা আহত হন, তাহলে বিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিযুক্ত দম্পতিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক নাজমুল হাসান তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। আসামিপক্ষে তাদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চলাকালীন মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সর্বশেষ ২১ মার্চ তাদের জামিন আবেদন নাকচ করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট সৈয়দ আশফাকুল হকের বাড়ির বারান্দা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন আরেক গৃহকর্মী ফেরদৌসী। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় আহত ওই গৃহকর্মীর মা জোসনা বেগম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর সৈয়দ আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার ও আসমা আক্তার নামে আরেকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।
অব্যাহতির নোটিশের তথ্য অনুযায়ী, সৈয়দ আশফাকুল হক ১৯৯৩ সালে দ্য ডেইলি স্টার-এর ক্রীড়া বিভাগে যোগদান করেন। এরপর তিনি ক্রমান্বয়ে ক্রীড়া সম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, প্রধান বার্তা সম্পাদক এবং অবশেষে ২০১৯ সাল থেকে আজ (২ এপ্রিল) পর্যন্ত পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।