অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন তৈরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যে নারী
কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে বর্তমানে বিশ্বের ১৬০টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। আর ভ্যাকসিন হিসেবে ইতোমধ্যে যে ভ্যাকসিনগুলো সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক ফল দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন। আর এই ভ্যাকসিন তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন একজন নারী। তার নাম সারাহ গিলবার্ট। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারাহ মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ফ্লু ভ্যাকসিনের উদ্ভাবনেও কাজ করেছেন।
উল্লেখ্য মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত ৭ মাসে বিশ্বের ৬ লাখ ৪ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ। ঝুঁকির মুখে রয়েছে আরও কোটি মানুষ।
চলতি দশকের শুরুর দিকে আফ্রিকা জুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ইবোলার ভ্যাকসিন উদ্ভাবনেও রয়েছে সারার অবদান। ফলে স্বাভাবিকভাবে এবারও তার সাফল্যের আশায় যুক্তরাজ্যসহ সারা বিশ্বের মানুষ।
গত সপ্তাহে ব্রিটিশ একটি গণমাধ্যমে প্রচারিত এক টক শোতে সারার কাছে জানতে চাওয়া হয় করোনার একটি কার্যকরী ভ্যাকসিনের সন্ধান তিনি দিতে পারবেন কিনা। উত্তরে সারা জানান, "অবশ্যই আশা রয়েছে। তবে শতভাগ কার্যকর হওয়ার বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারে না।''
তিনি বলেন, "আমরা যা করতে পারি, তা হল ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করতে পারি— আমরা সেই কাজটাই করছি।"
ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলে সারাহ যখন প্রথমবারের মতো তার উদ্ভাবিত এই পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের ট্রায়াল পরিচালনা করেন তখন এতে অংশ নেন তার তিন সন্তান।
নিজের সন্তানদের দেহে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর বিষয়ে সারাহ ব্লুমবার্গকে বলেন, "এই বিষয়ে আসলে আমরা খুব বেশি আলোচনা করতে পারিনি কারণ আমি তো কাজের জন্য বাসায় থাকারই সময় পেতাম না।
"ভ্যাকসিনটি কতোটুকু শরীরে নিতে হবে এবং নেওয়ার পরে এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা আমরা জানতাম, কারণ এই কাজটি আমরা বহুবার করেছি। অবশ্যই আমরা নিরাপত্তার দিকটি খেয়াল রেখেই পরীক্ষা করেছি এবং এই বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই।"
স্কুল জীবন থেকেই ঔষধ তৈরির প্রতি ঝোঁক ছিলো সারাহ গিলবার্টের। কেটেরিং হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে ইউনিভার্সিটি অব অ্যাংলিয়া-য় জীববিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। তারপর ইউনিভার্সিটি অব হাল এ ডক্টরেট করেন।
পড়াশোনা শেষ করে লেস্টারের একটি সংস্থায় দুই বছর কাজ করেন। তারপর অন্য একটি বায়োটেক সংস্থায় ওষুধ প্রস্তুত সংক্রান্ত কাজে যোগ। ১৯৯৪ সালে চলে আসেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৪-এ রিডার পদে যোগ দেন। এর পর ২০১০-এ অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত হন জেনার ইনস্টিটিউটে, বর্তমানে যেখান থেকে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য কাজ করছেন তিনি।
গত ২৩ এপ্রিলে যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাসের এ টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেন সারাহ গিলবার্ট এবং তার সহকর্মীরা। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বেশিরভাগ মানুষকেই এক ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছিল। এর একমাস পর তাদের ৯৫ শতাংশের দেহেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি ৪ গুন বেড়ে যেতে দেখা গেছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানি। এ ধরণের ট্রায়ালের জন্য সাধারণত ৫ বছরের বেশি সময় লাগলেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো সারাহ ও তার দল মাত্র চার মাসেই ট্রায়ালটি শেষ করেন।
বিবিসি জানিয়েছে, ChAdOx1 nCoV-19 নামের এই টিকাটি তৈরি করতে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। শিম্পাঞ্জির শরীরের সাধারণ সর্দিকাশি তৈরি করে, এমন একটি ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন করে এই টিকাটি তৈরি করা হচ্ছে। এটাকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে এটা মানবদেহে সংক্রমণ তৈরি না করে। এটাকে করোনাভাইরাসের কাছাকাছি একটা সাদৃশ্যও দেয়া হয়েছে।
গবেষকরা একে একটি বড় রকমের প্রতিশ্রুতিশীল আবিষ্কার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে তারা বলছেন, এটি পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারবে কি-না, তা বলার সময় এখনও আসেনি। এ নিয়ে ব্যাপক আকারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও চলছে।
সারাহ'র বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কেইট বিংহ্যাম বলেন, "তিনি সারা বিশ্বের (ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান) চেয়ে অনেক এগিয়ে আছেন। এটা এ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত ভ্যাকসিন।"