আইএলও’র গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে দক্ষতা উন্নয়নে স্থানীয় সাফল্য তুলে ধরল বাংলাদেশ
দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং বিশেষ করে নারী, আদিবাসী সম্প্রদায় এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সমপর্যায়ের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ সহজগম্য ও সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
তবে এসব সফলতার পাশাপাশি শিল্পকারখানার উচ্চ-দক্ষ চাহিদা এবং সাধারণভাবে স্বল্প-দক্ষ শ্রমশক্তির মধ্যে দক্ষতার অমিল দূর করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি। মন্ত্রী শিল্প খাত এবং উন্নয়ন অংশীদারদের জীবনব্যাপী শিক্ষাকে উৎসাহিত করেন।
দেশের দৃশ্যমান পরিবর্তনের পাশাপাশি কাঠামোগত পরিবর্তন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে রয়ে যাওয়া বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আইএলও-এর স্কিলস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট শাখা গত ২৩ এবং ২৪ এপ্রিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুইদিনব্যাপী গ্লোবাল স্কিলস ফোরামের আয়োজন করে। সেখানে এসব বিষয় তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা'র সদর দপ্তরে অনুষ্ঠানে পরিবর্তনশীল বিশ্বে দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ এবং অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনার জন্য সরকার, চাকরিদাতা, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং উন্নয়ন অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আইএলও।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলেছে, কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা এবং দক্ষতা উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন পরিবর্তন সরকারের প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে। আর এ পরিবর্তনে উন্নয়ন অংশীদারদের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা এবং আইএলও প্রদত্ত কারিগরি সহায়তা পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছে।
অনুষ্ঠানে উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনা-প্যানেলে শিক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি আইএলও-এর মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ. হংবো, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব ফারুক আহমেদসহ নিয়োগকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি, প্রধান উন্নয়ন অংশীদার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডা সরকারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আইএলও-এর স্কিলস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট শাখার প্রধান শ্রীনিবাস রেড্ডির পরিচালনায় আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের অর্জন, বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং প্রস্তাবিত কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করেন।
আইএলও-এর মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ. হংবো বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার, আইএলও, ইইউ এবং কানাডার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ফলপ্রসু অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেন। হংবো সবুজ দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রশমন এবং অভিযোজনের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থা সহজগম্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূল করার মাধ্যমে সামাজিক সংহতি ও কর্মসংস্থান তৈরির প্রসঙ্গিকতা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের মহাসচিব জনাব ফারুক আহমেদ দক্ষতা উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অপরিহার্য ভূমিকা তুলে ধরে প্রয়োগকৃত শিক্ষানবিশ মডেলগুলোকে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়ন এবং সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনার পক্ষে পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সেক্রেটারি রেজওয়ানা সাকি শ্রমবাজারের উপযোগী উন্নত দক্ষতা অর্জনের জন্য কর্মরত শ্রমিকেরা যে বাধার সম্মুখীন হন তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি শ্রমিক সংগঠনগুলির সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সামাজিক সংলাপের ওপর গুরুত্ব দেন। এছাড়া দ্রুত বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি শুধু দেশীয় কর্মসংস্থানের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্যও বাংলাদেশি কর্মশক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইইউ-এর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি ইইউতে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদের বৈধ অভিবাসনের লক্ষ্যে অংশীদারিত্বের ঘোষণা দেন।
প্যানেল প্রতিনিধিরা ২০০৭ সাল থেকে তাদের দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার, আইএলও এবং উন্নয়ন অংশীদারদের প্রশংসা করেন।