১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের তত্ত্বাবধায়ক, আমিরাতের শেখ তাহনুনের সাক্ষাৎ যেভাবে পাবেন
আবুধাবির শেখ তাহনুন বিন জায়েদ আল নাহিয়ান মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের একজন। হংকং, লন্ডন বা নিউ ইয়র্ক থেকে শুরু করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে উড়ে আসা কোন বিনিয়োগকারী অথবা কোন অর্থদাতা তার সাথে ১০ মিনিট আলাপ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। কিছু সৌভাগ্যবান তার বিলাসবহুল ইয়াট মারিয়াহতে অতিথি হওয়ার সুযোগ পান যেখানে তিনি পারস্য উপসাগরে সূর্যের আলোর নিচে বসে দাবা খেলতে পছন্দ করেন। ট্রেডমার্ক সানগ্লাস পরে ফিটফাট থাকা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবারের বংশধর ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও ব্যক্তিগত তহবিলের তত্ত্বাবধান করছেন। সেই সম্পদের এক ভাগেও বিনিয়োগ করার সুযোগ পেলে তা বদলে দিতে পারে যে কোন ব্যক্তির ভাগ্য।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব শেখ তাহনুন এর সাথে দেখা করা বা তার সাথে আলাপ করার জন্য অনুমতি পাওয়া প্রায় একটি অসম্ভব কাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির মতো জায়গায় সফলতার জন্য সঠিক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফলতা অর্জনের জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবথেকে গুরূত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ৫০ বছর বয়সী শেখ তাহনুন আবুধাবির নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের ভাই এবং দেশটির প্রতিষ্ঠাতার সন্তান। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা শেখ তাহনুন এমন কেউ নন যার সাথে আপনি সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন। তার কাছে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে জটিল সামাজিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
শেখ তাহনুন এবং তার আর্থিক সংস্থাগুলোতে পৌঁছানোর জন্য যেতে হবে আল মারিয়াহ দ্বীপে। এই দ্বীপটি আবুধাবির আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্রের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বিশ বছর আগে প্রয়াত মার্কিন ধনকুবের স্যাম জেলের পরামর্শে শেখ তাহনুন এটি নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ফোর সিজন হোটেলের লবিতে ব্যাংকারদের সাথে আলোচনার পর বিনিয়োগকারীদের শেখ তাহনুনের কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। হয়ত আবুধাবি ব্যাংক পিজেএসসিতে যেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৃহত্তম ঋণদাতা অথবা তার ব্যক্তিগত বিনিয়োগ সংস্থা রয়েল গ্রুপ কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি জি৪২।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনি শেখ তাহনুনের একজন গেটকিপারের সাথে দেখা করতে পারবেন, যারা তার বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে এবং কারা তার সাথে দেখা করতে পারবে সেই সিদ্ধান্ত নেন। অনেকের নাম আপনি প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে খুঁজে পাবেন না, তাই আপনাকে সঠিক লোকটিকে খুঁজে বের করতে হবে কিংবা সঠিক লোকের খোঁজ দিতে পারবে এমন লোককে খুঁজে বের করতে হবে। ব্যাংকার, আইনজীবী এবং পরামর্শদাতারা দুবাই এবং আবুধাবির ক্যাফেতে বসে গোপনে এই নামগুলো বিনিময় করে। (এ অংশটি শেখ তাহনুনের আর্থিক সাম্রাজ্যের সাথে পরিচিত চার ডজনেরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। তাদের মধ্যে তার কোম্পানির বর্তমান এবং সাবেক কর্মচারী, বিদেশি মধ্যস্ততাকারী, ব্যাংকার এবং আইনজীবী রয়েছেন। বেশিরভাগই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন কারণ তারা যেসব তথ্য দিয়েছেন সেগুলো গোপনীয় তথ্য। রয়্যাল গ্রুপ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের মাধ্যমে পাঠানো মন্তব্যের অনুরোধের কোন জবাব দেননি শেখ তাহনুন।)
প্রতিযোগীদের টক্কর দিয়ে শেখ তাহনুনের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে দেখা করতে ও তার সাথে কোন সফল চুক্তি করার জন্য সঠিক গেটকিপারের সাথে সম্পর্ক তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাটলাস ক্যাপিটাল টিম ইনকর্পোরেটেড-এর সিইও রেজা বান্ডি এই সূক্ষ্ম সামাজিক সম্পর্কের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, শেখের কাছে নতুন কোন পরিকল্পনা নিয়ে যাওয়ার যে তাৎপর্য, শেখের একজন গেটকিপারের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকা একই পরিমাণ তাৎপর্য বহন করে। একজন বিনিয়োগকারী একটি চমৎকার প্রস্তাব নিয়ে এসে গেটকিপারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারে তাহলে সেটির আর কোন গুরুত্বই থাকে না।
সঠিক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক থাকার সুবিধা অনেক আগেই টের পেয়েছিলেন মার্কিন ধনকুবের স্যাম জেল। আবুধাবির আধুনিকায়নের সময়েই তিনি দেশটি রাজ পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করেন। ২০২২ সালের এক সাক্ষাৎকারে শেখ তাহনুনের ছোট ভাই শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের (যিনি এবিজেড নামে সুপরিচিত) ২০০৫ নিউ ইয়র্ক সফরের কথা স্মরণ করেছিলেন জেল। ম্যাক্সিকোতে তিনি সূলভমূল্যে যে আবাসন প্রকল্ক চালু করেছিলেন সেটার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজ পরিবার। তাই দুজনে মিলে একসাথে একটি মিটিং আয়োজন করেছিলেন। মিটিংটি সফল হয়েছিল এবং শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ (যিনি পরবর্তীতে ইউএইর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন) স্যাম জেলকে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তখন শেখ তাহনুন তার ছয়জন ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র ভাই ছিলেন যিনি কোন সরকারি চাকরিতে যুক্ত ছিলেন না। তারা বনি ফাতিমা বা ফাতিমার ছেলে নামে পরিচিত ছিলেন। তার বাবা মারা যাওয়ায় পর শেখ তাহনুন তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়েছিলেন যা তার রয়্যাল গ্রুপকে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠিত হতে বড় সহায়তা করেছিল।
প্রতি সন্ধ্যায় এমবিজেড নামে পরিচিত বড় ভাই শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান (২০২২ সালের মে মাস থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট) এবং শেখ মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের (বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট) নেতৃত্বে বনি ফাতিমা পরিবার আল নাহিয়ান প্রাসাদে জড়ো হতেন। তারা তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করা নিয়ে পরস্পরের সাথে আলোচনা করতেন, নিজেদের অন্তর্দৃষ্টি ভাগাভাগি করতেন এবং তাদের কৌশল ঠিক করতেন। এছাড়া উপস্থিত থাকতেন শেখ তাহনুন, শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান (এবিজেড) সহ খালদুন আল মুবারক ও ইউসুফ আল ওতাইবার মতো বিশ্বস্ত উপদেষ্টারা।
আবুধাবিতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় এমবিজেড-এর সাথে স্যাম জেলের বন্ধুত্ব হয়। পরে শেখ তাহনুন জেলের ব্যবসায়িক পরামর্শ চাওয়ায় তাদের মধ্যেও বন্ধুত্ব হয়। তারা দুজনে শিকাগোতে মধ্যাহ্নভোজ এবং মরক্কোতে একসাথে শিকার করতে গিয়েছিলেন। স্যাম জেল শেখ তাহনুনের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা মরোক্কোর নাগরিক সোফিয়া আবদেলাতিফ লাস্কির সহযোগিতা নিয়েছিলেন। স্যাম এবং শেখ তাহনুনের মধ্যে মিটিং আয়োজনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন লাস্কি।
বিগত দুই দশকে সোফিয়া আবদেলাতিফ লাস্কি আবুধাবির খলিফা পার্কে অবস্থিত তার নবম তলার অফিস থেকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের রয়্যাল গ্রুপের দৈনিক কাজের তদারকি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থায়নের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। প্রাথমিকভাবে রয়্যাল গ্রুপ একটি নির্জন থেকে কাজ করে, ব্যাংকারদের ঠিকানা সহ কাগজের স্লিপ দেয়। বর্তমানে আল বাতেন এক্সিকিউটিভ এয়ারপোর্টের কাছে অবস্থিত একটি নীল বিল্ডিংয়ে রয়্যাল গ্রুপ প্রাইভেট জেটে আগত অতিথিদের স্বাগত জানায়। এর আগে একটি নাম না জানা ভিলাতে ব্যাংকারদের সাথে বা অতিথিদের সাথে সাক্ষাৎ করতো রয়্যাল গ্রুপ।
রয়্যাল গ্রুপের ওয়েবসাইটে লাস্কির নাম না থাকলেও ফার্মটির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তিনি কার্যত রয়্যাল গ্রুপের সিইও এবং সহায়ক হিসেবে ফার্মটির বোর্ড সদস্য। উল্লেখযোগ্যভাবে লাস্কির নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং কোং ও আলফা ধাবি হোল্ডিং পিজেএসসি-এর মতো কোম্পানিগুলোর মোট বাজার মূল্য ২৮০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। ব্লুমবার্গের অনুরোধ সত্ত্বেও লাস্কি তার ভূমিকা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি।
রয়্যাল গ্রুপের অসংখ্য প্রতিষ্ঠানসহ আবুধাবি জুড়ে অনেক সম্পদ ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে রয়েছে ফাস্ট-ফুড চেইন, ফার্মেসি, ডেন্টাল ক্লিনিক, অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল, স্কুল, শপিং মল, জিম, বিচ ক্লাব, মোটরসাইকেলের দোকান, কারখানা এবং টেলিকম অপারেটর। মূল কোম্পানিতে ২৫ হাজারের বেশী কর্মী রয়েছে এবং এর আইএচসি ইউনিটে আরো ১ লাখ ৫৫ হাজার কর্মী যুক্ত আছেন। প্রতিষ্ঠানটির সাথে যুক্ত ডাক্তাররা রাবেয়া একাডেমিতে, সিনেমা থিয়েটারের কর্মীরা সিনে রয়্যাল সিনেমা এলএলসি, শেফরা নিনার রেস্তোরাঁ ও ক্যাফেটেরিয়া এলএলসি এর মতো বিভিন্ন সহায়ক সংস্থার জন্য কাজ করছে।
আল নাহিয়ান পরিবারের সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি আবুধাবি একটি বৈশ্বিক আর্থিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। দেশটি পৃথিবীর মোত তেলের মজুদের ৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। আবুধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (এডিআইএ) এবং এডিকিউ এর তত্ত্বাবধানে আবুধাবি ১.১ ট্রিলিয়ন ডলারের পুঁজি নিয়ে নিজেকে 'পুঁজির রাজধানী' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। উভয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ শেখ তাহনুনের হাতে। বনি ফাতিমা পরিবারের সদস্যরা অনেক সরকারি পদে অধিষ্ঠিত যা তাদের সাথে সাক্ষাৎ করার কাজটিকে আরো কঠিন করে তোলে।
লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি শেখ তাহনুনের সাথে দেখা করার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছেন। যারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তারা চূড়ান্ত যাচাইয়ের জন্য লাস্কির দেখা পেতে পারেন।
হারিরি প্রায়ই আবুধাবির সেন্ট রেজিস সাদিয়াত আইল্যান্ড রিসোর্টে মিটিং করেন। তিনি বর্তমানে আবুধাবিতে থাকছেন। একাধিক সংকটের কারণে লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি ২০২২ সালে সেখানে চলে যান। সৌদি নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও দেশটির সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হয়। ২০১৭ সালে তিনি রিয়াদ থেকে টিভিতে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। লেবাননের কর্মকর্তারা সৌদির বিরুদ্ধে তাকে জিম্মি করার অভিযোগ এনেছিল। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং তার পরিবার সংকটে পড়ায় তিনি আবুধাবিতে নতুন করে শুরু করার চেষ্টা করার। তিনি আবুধাবির অগ্রসর চিন্তাভাবনা এবং বিনিয়োগের সুযোগের প্রশংসা করেছেন।
আম্মান, মাস্কাট ও তিউনিসে দায়িত্ব পালন করা যুক্তরাজ্যের সাবেক কূটনীতিক বিল মারে আবুধাবির রাজপরিবারের আরেকজন উপদেষ্টা। বিষয়টির সম্পর্কে অবগত আছেন এমন ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আবুধাবিতে রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে মারের নিয়োগের সময় তার এবং শেখ তাহনুন একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তিনি সম্প্রতি টাউ ক্যাপিটাল চালু করতে সাহায্য করেছেন যেটি শেখ তাহনুন দ্বারা সমর্থিত। ফার্মটি ডিপ টেক স্টার্ট-আপ ও মৌলিক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির বিষয় নিয়ে কাজ করছে।
প্রতিটি অঞ্চলেই প্রভাবশালী লোক রয়েছেন যাদের সহায়তায় আমিরাত বিনিয়োগ করতে পারে। সিরিয়াস ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং-এর অজয় ভাটিয়া বিলিয়নেয়ার গৌতম আদানিসহ ভারতের সাথে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদনের বিষয়গুলো দেখে থাকেন। সাবেক মিস গ্লোব কলম্বিয়া মেলিসা মনকাদা রয়্যাল গ্রুপের ল্যাটিন আমেরিকান চুক্তিগুলো পরিচালনা করেন। মোহাম্মদ নাসের আল শামসি আফ্রিকান খনির চুক্তির বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে তাদের কেউই তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে কোন মন্তব্য করেননি।
এ ধরনের চুক্তিগুলো বহু বছরের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ভারতীয় বিনিয়োগকারী রাজীব মিশ্র মধ্যপ্রাচ্যে তার যোগাযোগ ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে সফটব্যাংক এর ভিশন ফান্ডের জন্য বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার পর সম্প্রতি তার নিজস্ব ফার্ম ওয়ান ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছেন। রাজীব মিশ্র মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুবাদালা ইনভেস্টমেন্ট কোং এবং রয়্যাল গ্রুপের সমর্থন পেয়েছেন। বলা হয়, তিনি শেখ তাহনুনের কাছের লোক লাস্কিসহ অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইএইচসি এর সৈয়দ বাসার শুয়েব এবং জি৪২-এর পেং জিয়াও এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দেশটিকে তেলভিত্তিক অর্থনীতি থেকে অর্থ ও প্রযুক্তির দিকে পরিবর্তন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আইএইচসি দ্রুত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। দুই বছর আগে কোম্পানিটি আদানির ৩টি কোম্পানিতে ২ বিলিয়ন ডলারের মতো বিনিয়োগ করছে।
অন্যদিকে জি৪২ কোম্পানিও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্বব্যাপী একটি নেতৃস্থানীয় এআই ফার্ম হয়ে উঠেছে। এর একটি বড় প্রকল্প হল এমিরাতি জিনোম প্রোগ্রাম যার লক্ষ্য হল স্থানীয়দের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তথ্য সংগ্রহ করে একটি ডেটা ম্যাপ তৈরি করা। শেখ তাহনুনকে চেনেন এমন ব্যক্তিরা মনে করেন, শেখের দীর্ঘায়ুর ব্যাপারে (অন্তত ১৫০ বছর বেঁচে থাকা) যে আগ্রহ আছে তার সাথে এই প্রকল্পের সম্পর্ক আছে।
আবুধাবির বৃহত্তর লক্ষ্য হল ক্ষুদ্র আয়তন সত্ত্বেও অর্থ ও ভূ-রাজনীতিতে বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী দেশ হওয়া। এই আকাঙ্ক্ষা থেকে শেখ থানুন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং ল্যাজার্ডের মতো কোম্পানিগুলো কেনার কথা বিবেচনা করেছেন। ওপেনএআই এর স্যাম অল্টম্যানের মতো বড় নামগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব করে বেশ কিছু বিলিওনিয়ারকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অফিস বানানোর সুযোগ করে দিয়েছে। পাশাপাশি দোকান স্থাপনের জন্য রে ডালিও এবং চ্যাংপেং ঝাও-এর মতো বিলিয়নেয়ারদের আকৃষ্ট করেছে৷ গত বছর ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতিনিধিত্বকারী অর্থ সংস্থাগুলো আবুধাবির আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্রে কাজ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের চুক্তিগুলো দেশটির অর্থনীতির সাথে সংযুক্ত জাতীয় নিরাপত্তার প্রতিফলিন। এর আকার ছোট হওয়া সত্ত্বেও এটি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ করেছে। মার্কিন প্রযুক্তি থেকে শুরু করে চীনা এআই, জাম্বিয়ান তামার খনি এবং ভারতীয় সৌর প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করছে।
ব্যবসায়িক বন্ধন থেকে প্রায়ই রাজনৈতিক সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এক্সিকিউটিভ এবং এমবিজেড এর বন্ধু রিক গারসন আএইচসির মাল্টিপ্লাই-এর বোর্ডে কাজ করেন। তিনি জ্যারেড কুশনারের ঘনিষ্ঠ এবং তাকে আবুধাবির রাজপরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ট্রাম্প ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরির সুবিধার্থে। ট্রাম্পের ২০১৬ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পরেই নিউইয়র্কে কুশনার, ব্যানন, ফ্লিন, এমবিজেড এবং শেখ তাহনুনকে নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল যা ভবিষ্যতের কূটনৈতিক পদক্ষেপের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। শেখ তাহনুন ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার লক্ষ্যে কাতার ও ইরানের সাথে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার ব্যাপারে কুশনার বলেছিলেন, "তিনি চান এ অঞ্চলের সবগুলো দেশ একসাথে কাজ করুক।"
মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হিসেবে কুশনারের হোয়াইট হাউজ পরবর্তী কর্মজীবন শুরু হয়েছিল। তার ফার্ম অ্যাফিনিটি পার্টনার সৌদি আরবের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল থেকে কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২ বিলিয়ন ডলারের পুঁজি পেয়েছিল। বিষয়টির সাথে অবগত কয়েকজন ব্যক্তি নাম না প্রকাশ করার শর্তে তথ্যগুলো দিয়েছেন।
শেখ তাহনুন যিনি তার কৌশলগত বিনিয়োগের জন্য পরিচিত, তিনি ওয়াল স্ট্রিট এবং বিশ্বের নামি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বাজারের বিভিন্ন তথ্য ও কৌশল সংগ্রহ করে তার নিজস্ব বিনিয়োগ পদ্ধতিকে আলাদা একটি রূপ দিয়েছেন।
যখন বিনিয়োগকারীরা আবুধাবিতে যান তখন তারা হয়ত শেখ তাহনুনের সাথে বাইক চালানো বা মার্শাল আর্ট সেশনে যোগ দিতে পারেন। ব্রাজিলিয়ান জুজিৎসুতে তার ব্ল্যাক বেল্ট আছে। খেলাটির প্রতি আবেগ তেহেক তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত জুড়ে কমব্যাট জিম স্থাপন করেছেন। এসব জিম রয়্যাল গ্রুপের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। অনেক বিনিয়োগকারী এসব জিমে গিয়ে ধরনা দেন শেখ তাহনুনের সাথে বহু আকাঙ্ক্ষিত সাক্ষাতের অপেক্ষায়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে দীর্ঘদিনের ব্যাংকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বিনয় কাপুর আবুধাবি রাজপরিবারের সাথে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি জানিয়েছেন, সত্যতা ও প্রকৃত সম্পর্কের ওপর শেখ তাহনুনের আস্থা আছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা জানেন শেখের দেখা পাওয়ার জন্য তার আস্থাভাজনদের সাথে পরিচিত হওয়া ও সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টি যতটা সহজ মনে হয়, সেটি ততটা সহজ নয়।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়