সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার উন্নয়নে এডিবির অন্তত ১০% জলবায়ু খাতে ব্যয়ের প্রস্তাব
দেশের সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলোকে তাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ন্যূনতম ১০ শতাংশ অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সবুজায়নের জন্য ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৯ মে) সকালে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে নগর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের (সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা) সবুজ ও জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলার সক্ষমতা সম্পর্কিত প্রকল্পে পরিকল্পনা, অর্থায়ন, ও বাস্তবায়ন এবং সেবা প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশিকা চূড়ান্তকরণের কন্সালটেশন ওয়ার্কশপে এ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
পরিকল্পনা প্রস্তাবনায় একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম। এ সময় তিনি বলেন, "যেহেতু মোট এডিপি বরাদ্দের ১০% বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেহেতু স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজ ও জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।"
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, "সবুজ ও জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় বহুমুখী ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা একান্তই জরুরি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।"
সিটি করপোরেশনের জন্য এডিপির অধীনে উন্নয়ন সহায়তার বরাদ্দ এবং ব্যবহারের নির্দেশিকা (২০২৩) অনুযায়ী— রাস্তা এবং কালভার্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ ৩৫%, জলাবদ্ধতা নিরসন ২৫%, জনস্বাস্থ্য এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সর্বোচ্চ ৪০%, পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ১৫% বরাদ্দের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বচ্চ মোট ২০% বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এছাড়া এডিপির আওতায় পৌরসভার উন্নয়ন সহায়তার জন্য খাতভিত্তিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যে ১৫%, আর সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উদ্যোগে মোট বরাদ্দের মাত্র ৫% দেওয়া হয়।
পৌরসভার উন্নয়ন সহায়তার বাকি পুরোটাই পানীয় জল এবং পয়ঃনিষ্কাশন, বাজার ও বাস টার্মিনাল নির্মাণ, রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা উভয়ের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এর অধীনে উন্নয়ন সহায়তা বরাদ্দ ও ব্যবহারের নির্দেশিকা ২০২৩ এ কতগুলো প্রধান ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। যেখানে নগর স্থানীয় সরকার সবুজ ও জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলা সম্পর্কিত স্থানীয় অবকাঠামো তৈরি অথবা পরিচালনায় তাদের এডিপি বরাদ্দের ন্যূনতম ১০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং ওয়াসার কার্যকারিতা কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "ঢাকায় সম্পূর্ণ পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত, সবাইকে পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার স্থাপন করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন লাইন ভেঙ্গে দশেরহাট পয়ঃনিষ্কাশন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পথে তা ফুটো হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে।
"এছাড়া, প্লাস্টিক বোতলে পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক্সটেন্ডেড প্রডিউসর রেসপনসিবিলিটি (ইপিআর) এর আওতায়, অর্থাৎ আইন করে প্লাস্টিক বোতলের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের রেসপনসিবিলিটি নিতে বাধ্য করতে হবে।"
এছাড়াও জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য উন্নত বিশ্বকে দায়ী করে মেয়র বলেন, "উন্নত বিশ্বের কারণে জলবায়ু বিপর্যয় হচ্ছে। তার দরুণ আমাদের গ্রাম থেকে অনেক মানুষ শহরে চলে আসছে। তাদের খাদ্য ও পুষ্টি ও নিরাপত্তার জন্য উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে ফান্ড আদায় করতে হবে।"
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, "জলবায়ু পরবর্তনের ফলে ঢাকাসহ সকল শহর অঞ্চলে বিভিন্ন বস্তি ও নিম্ন আয়ের সোসাইটি তৈরি হচ্ছে, যাদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসব সমস্যা সমাধানে বিশ্বব্যাংকের সাথে কাজ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।"