মার্চে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মাধ্যমে ঋণ বিতরণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১% বেড়েছে
চলতি বছরের মার্চে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১.২৭ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মার্চে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ১৬ হাজার ৪৮২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
গত বছরের মার্চে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছিল ১১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, আগের বছরের তুলনায় আমানত ও রেমিট্যান্স প্রবাহও যথাক্রমে ১৬.৫২ শতাংশ ও ২৩.১১ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যাংকাররা জানান, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রসারের ফলে গ্রামীণ পর্যায়ে অনেক মানুষ যারা আগে ব্যাংকিং সেবার আওতা থেকে বাইরে ছিলেন, তারা এখন সহজেই নিজেরাই সেবা নিতে পারছেন। মূলত এ কারণেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণের প্রবাহ বেড়েছে।
এ বিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'ব্যাংকগুলোর নতুন নতুন সেবার বিস্তারের কারণে ব্যাংকিং সিস্টেমে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। আর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রসারের কারণ গ্রামীণ পর্যায়ে ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সামনে যত সময় যাবে, এজেন্ট ব্যাংকিং আরও জনপ্রিয় হবে। এখন গ্রামীণ পর্যায়ে বায়োমেট্রিক মডেলে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে। লেনদেনে হলেই মেসেজ সার্ভিস রয়েছে। যার কারণে অনিয়ম হওয়ায় অশঙ্কা কম। ফলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণে উৎসাহ বাড়ছে।
'এছাড়া অনেক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের সহজে ছোট ঋণ দেওয়া শুরু করেছে, যার কারণে ঋণ বাড়ছে। অনেকে ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে ঋণও দিচ্ছে, যা প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দিয়েছে।'
শরিয়াভিত্তিক একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে বলেন, 'এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কম সময়ের জন্য ঋণ দেওয়া হয়। এছাড়া এসব ঋণ আদায়ের হারও খুবই বেশি।
'তাছাড়া গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের খরচ মেটাতে এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে ঋণ নিচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং পর্যাপ্ত আর্থিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে গ্রামীণ নারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা ও রেমিট্যান্সের সুবিধাভোগীদের জন্য।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হুসেন বলেন, 'আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণের ৫৩ শতাংশ বিতরণ হয় এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট থেকে। সারা দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণ বিতরণে ব্র্যাক ব্যাংকের অংশ ৬২ শতাংশ।'
মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৩১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের পরিমাণ এখনও আমানতের পরিমাণের তুলনায় উল্লেখযোগ্য নয়।
বেশিরভাগ ব্যাংক এখনও এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ও আদায়ের জন্য কার্যকর অবকাঠামো তৈরি করতে পারেনি বলে আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণ বাড়েনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো তাদের মোট আমানতের শতভাগের মধ্যে ঋণ হিসেবে ৮৭ শতাংশ বিতরণ করতে পারবে। তবে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংগুলো ঋণ হিসাবে ৯২ শতাংশ বিতরণ করতে পারবে।
আমানতের তুলনায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'গ্রামীণ পর্যায়ে মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয়। ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ সুদহার এখন ১৩ শতাংশের মতো। এই রেটে গ্রামীণ পর্যায়ে ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য কঠিন, কারণ কস্ট অব ট্রানজেকশন ও কস্ট অব রিটার্ন বেশি।'
তিনি আরও বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ঋণে অতিরিক্ত ১-২ শতাংশ প্রণোদনা দিত, তাহলে ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ত। আমাদের ব্যাংক এশিয়ার তারপরও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মাধ্যমে ঋণ বাড়ছে।'
চলতি প্রান্তিকে বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সব দিক থেকেই প্রসারিত হয়েছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংকের এজেন্টের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৮৩৫, আর আউটলেট ছিল ২১ হাজার ৬১৩টি।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩০৫টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ এলাকায়ই ৮৬ শতাংশ গ্রাহক।