কালো, পাচারকৃত অর্থের ১% পুনরুদ্ধারে রাষ্ট্রের কোষাগারে বাড়বে ১৫,০০০ কোটি টাকা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/06/03/bangladesh_economic_association_0.jpg)
কালো এবং পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের ওপর ভিত্তি করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। তাদের এ বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরে সরকারের বাজেটের চেয়ে ১ দশমিক ৫৭ গুণ বেশি।
সোমবার (৩ জুন) রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দেওয়ার সময় সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, "১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে সৃষ্ট মোট পুঞ্জিভূত কালো টাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আমরা পুঞ্জিভূত মোট কালো টাকার মাত্র ০.৯৮ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি , যেখান থেকে উদ্ধারকৃত আহরণ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা।"
তিনি বলেন, "১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে মোট পুঞ্জিভূত অর্থ পাচারের আনুমানিক পরিমাণ হবে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আমরা পুঞ্জিভূত মোট অর্থ পাচারের ০.৪৯ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি, যেখান থেকে উদ্ধারকৃত আহরণ হবে ৫,০০০ কোটি টাকা।"
সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, "দুর্নীতির ক্ষেত্রে সরকারের নীতি 'শূন্য-সহনশীলতা' হলেও দেশে দুর্নীতি বহুলবিস্তৃত, যোগসাজশে সম্পন্ন এবং গভীরতায় বিশদ। এই জঞ্জাল না সরাতে পারলে কাঙ্খিত পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। সম্প্রতি দু'একজন রাঘববোয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কারণে শুরু করা পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।"
তিনি বলেন, "আশা করি তা চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে। অতীতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে, এবার সেরকম অভিযানের পথ মাঝে থেমে যাবে না আশা করি। আরো চাই, অন্যান্য বড় বড় দুর্নীতিবাজদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক। এ রকমটি হলে হবু দুর্নীতিবাজরা সে পথ নাও আসতে পারেন।"
ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, "এছাড়া অনেক দিন থেকে চলে আসা কয়েকটি সমস্যা স্মরণে আনতে চাই। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের সংকট, অতি মাত্রার খেলাপি ঋণ এবং সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংকের টালমাটাল অবস্থা। এখানেও দুষ্টচক্রগুলো দমনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর অবশ্যই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।"
তিনি বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে আয় বৈষম্য অনেক বেড়েছে। বৈষম্য পরিমাপক জিনি সহগ ২০১০ সালের ০.৪৫ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ০.৫০ হয়েছে, যা খুবই উদ্বেগজনক ।
ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত রপ্তানি বহুমূখীকরণেও অগ্রগতি তেমন নেই। এখনো তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার থেকে বার্ষিক রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের ওপর আসছে।"
সম্ভাব্য অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপের সঙ্গে উপযুক্ততা বিবেচনায় পণ্য উৎপাদনে আমদানিকৃত উপকরণে শুল্ক প্রত্যাহার বা কমিয়ে আনলে, তা সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
গত বছর বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরার সময় বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএ) প্রেসিডেন্ট ছিলেন ড. আবুল বারকাত।
গতবছর ২০ লাখ ৯৮ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট দেওয়া হয়েছিল, এবার এর পরিমাণ কমানো হয়েছে কেন- এ প্রশ্নের জবাবে বিইএ'র সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. আবুল বারকাত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, '২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট ছিল, এবার তা ১১ লাখ ৯৪ কোটি টাকা। সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা একটা বড় কারণ এবারের বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা কম দেওয়ার জন্য।'
বিইএ'র সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আইনুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'সার্বিক পরিস্থিতির কারণে গত অর্থবছরের চেয়ে এবার আমরা বিকল্প বাজেট কমিয়েছি। সারাবিশ্বের অর্থনীতি এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা এটা কমিয়েছি। তারপরও আমরা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের বাজেটের চেয়ে ১.৫৭ গুণ বাড়িয়েছি। সরকারের এটা বাস্তবায়নের সক্ষমতা আছে। তাই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।'