গতিসীমা ছাড়ালে গাড়ি জব্দ করে বিক্রি করে দিতে পারবে এ দেশের সরকার
সড়কে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য নেওয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ অস্ট্রিয়ার সরকার।
সম্প্রতি নতুন এক আইন পাশ করেছে ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়া। এ আইনের ক্ষমতাবলে যারা ঘণ্টার ৬০ কিলোমিটারের বা তার বেশি গতিতে গাড়ি চালালে ওই গাড়ি জব্দ করে নিতে পারবে সরকার। শুধু তা-ই নয়, জব্দ গাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে সরকারকে।
সম্প্রতি অস্ট্রিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে। সে কারণেই নিরাপত্তা জোরদার করতে এ উদ্যোগ নিল দেশটি।
অস্ট্রিয়ার পরিবহন মহাপরিচালক ভেরা হফবাউয়ার ব্লুমবার্গ নিউজকে বলেছেন, নতুন আইন পাশ হয়েছে বেশিদিন হয়নি, তবে এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আইনটি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকার অতিরিক্ত গতিতে চালানো একটি গাড়ি জব্দ করেছে বলে জানান তিনি।
২০২২ সালে অস্ট্রিয়ায় প্রতি ১ লাখে ৪.১ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। হফবাউয়ার বলেন, যেসব চালক 'তাদের গাড়িকে অস্ত্রের মতো ব্যবহার করছেন', তাদের থামানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, 'মাঝে মাঝে এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হয় যা প্রথমে অদ্ভুত শোনায়, এবং এমন কিছু আইনি প্রশ্ন তুলে দেয় যার উত্তর দেওয়া আবশ্যক। তবে আমি মনে করি, দুর্ঘটনা কমানোর জন্য আমাদের পক্ষে সম্ভব সবকিছুই চেষ্টা করে দেখা উচিত।'
বিপজ্জনক গাড়িচালনা থামানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তালিকায় অবশ্য অস্ট্রিয়ার কর্মকর্তারা একা নন। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর সড়ক নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়ন করেছে। কিছু দেশে গাড়িচালকের আয়ের ভিত্তিতে 'স্পিডিং টিকিট' (গতিসীমা ছাড়ানোর জরিমানা) হিসাব করা হয়। তাই গাড়িচালক যত ধনী হন, তার জরিমানাও হয় তত বেশি।
সুইজারল্যান্ডে ২০০৭ সাল থেকে আয় ও সম্পদ দুটোর ভিত্তিতেই গতিসীমা ছাড়ানোর জরিমানা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ২০১০ সালে দেশটিতে ঘণ্টায় ৭৫ মাইল গতিসীমার এলাকায় ১৮০ মেইল গতিতে মার্সিডিজ স্পোর্টস কার চালানোর জন্য এক চালককে ১০ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়েছিল।
গত বছর ফিনল্যান্ডে একজন ধনকুবেরকে গতিসীমার চেয়ে ১৮ মাইল বেশি গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। ২০২২ সালে ইউরোপিয়ান কমিশন ২০২৪ সাল থেকে সব নতুন গাড়িতেই কোনো গাড়িচালক গতিসীমা অতিক্রম করলেই তাকে সতর্ক করার প্রযুক্তি যোগ করা বাধ্যতামূলক করে। আশা করা হচ্ছে এ পদক্ষেপের ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ২০ শতাংশ কমবে।
এসব সম্ভবত কাজে দিচ্ছে। যেসব দেশ সবচেয়ে কঠোর সড়ক আইন বাস্তবায়ন করেছে, ওইসব দেশের সড়কই সবচেয়ে নিরাপদ। সুইজারল্যান্ডে প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যায় সড়কে মৃত্যুর হার প্রায় ২.৬—যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন। গত এক দশকে দেশটিতে সড়কে মৃত্যুর হার ইইউর গড় হারের চেয়ে অনেক কমে গেছে।