চার বছরের সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসেও (জুলাই-মে) সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বরাদ্দের ৪২.৪৬ শতাংশ বরাদ্দ অব্যবহৃত রয়ে গেছে।
বুধবার (২৬) প্রকাশিত বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে সংশোধিত এডিপি বরাদ্দের ৫৭.৫৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা গত চার অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
গত অর্থবছরের একই সময়ে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৬১.৭৩ শতাংশ এবং তার আগের অর্থবছরে এ হার ছিল ৬৪.৮৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১.৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭৫.৫০ কোটি টাকা।
আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অনেক প্রকল্পের কাজের শেষ হয়ে গেছে, কিন্ত বিল পরিশোধ না করার কারণে বাস্তবায়ন হার কম হতে পারে।
তবে অর্থবছরের শেষ মাসে বাস্তবায়নে বড় উল্লম্ফন হবে বলে মনে করেন তিনি।
আইএমইডি সচিব আরও বলেন, 'এবার এডিপি বাস্তবায়ন হার কেন কম হচ্ছে, তা পর্যালোচনা করে দেখবে আইএমইডি। এবং আগামী অর্থবছরের শুরু থেকে যেন বাস্তবায়ন গতি বাড়ে, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব মো. মামুন আল-রশীদ টিবিএসকে বলেন, সরকারের বাজেট ব্যয়ে অর্থবছরজুড়ে কর্মপরিকল্পনা ও ক্রয় পরিকল্পনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা অনুসরণ করেন না।
'এ কারণে আমাদের দেশে এখনও গতানুগতিভাবে এডিপি বাস্তবায়ন করা হয়। এবং দেখা যায় অর্থবছরের ৯-১০ মাসে অর্ধেক অর্থ ব্যয় হয়। শেষের দুই-তিন মাস এডিপি বরাদ্দে বড় অংশ ব্যয় করা হয় তড়িঘড়ি করে,' বলেন তিনি।
সাবেক এই পরিকল্পনা সচিব আরও বলেন, কর্মকর্তাদের দক্ষতায় ঘাটতি থাকলেও এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় সীমাবদ্ধতা হলো কর্মপরিকল্পনা ও ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন কাজ না করা।
এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, প্রকল্প পরিচালক ও সংস্থার প্রধানসহ সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনার সুপারিশ করেন।
জবাবদিহি নিশ্চিত করা না গেলে এডিপি বাস্তবায়নের গতানুগতিক প্রবণতা থেকে বের হওয়া সম্ভব না বলেও মনে করেন তিনি।
এডিপিতে তিন ধরনের উৎস থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সরকারের কোষাগারের তহবিল ছাড়াও উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ ও অনুদান অর্থ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হয়। এছাড়া সরকারি সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে কিছু বরাদ্দ থাকে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী চলতি, অর্থবছরে সরকারি তহবিল এবং বৈদেশিক ঋণ অনুদানের ব্যবহার দুটোই কমেছে।
এডিপিতে সরকারি তহবিল থেকে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে তার ৫২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে সরকারি সংস্থাগুলো। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৫৭.৪১ শতাংশ।
এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছে ৬৫.৮১ শতাংশ অর্থ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৭০.৭৬ শতাংশ।
১৫টি বড় মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে মোট এডিপি বরাদ্দের ৭৭.১৯ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া এসব মন্ত্রণালয় বিভাগের মধ্যে বরাদ্দের অর্ধেক অর্থও ব্যয় করতে পারেনি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ (৪৩ শতাংশ), নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর (৪২.৪৩ শতাংশ) ও সেতু বিভাগ (৪৯.৪২ শতাংশ)।
অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৫২.৭৮ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ৫২.৮৭ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৫৮.২৩ শতাংশ এবং গৃহায়ণ ও গণপূ্র্ত মন্ত্রণালয় ৫৪.০৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।
বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তয়নের হার কিছুটা ভালো। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ ৭৭ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৭২.৯৮ শতাংশ ও কৃষি মন্ত্রণালয় ৭১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।