মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: বিতর্কে মুখোমুখি বাইডেন-ট্রাম্প
২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো বিতর্কে অংশ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (২৮ জুন) সকাল সাতটার দিকে জর্জিয়ার সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে এই বিতর্ক শুরু হয়। খবর বিবিসি'র।
'সিএনএন প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট' সঞ্চালনা করছেন নেটওয়ার্কের দুইজন শীর্ষ উপস্থাপক, জেক ট্যাপার এবং ডানা ব্যাশ। ২০২০ সালে ট্রাম্প হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন ডেমোক্র্যাট বাইডেন ও রিপাবলিকান ট্রাম্প।
প্রথমে সঞ্চালকরা দুটি বিরতিসহ ৯০ মিনিটের এই বিতর্কের সকল নিয়ম বলে দেন। কোভিড-১৯ বিধিনিষেদের কারণে করমর্দন না করতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয় তাদের।
প্রথমেই অর্থনীতি নিয়ে বিতর্কে জড়ান তারা। প্রথম প্রশ্নটি ছিল মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে।
বাইডেন বলেন, ট্রাম্প ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের সাথে একটি ভেঙে পড়া অর্থনীতি রেখে গেছেন। ট্রাম্পের অধীনে পরিস্থিতি 'ভয়াবহ' ছিল এবং তিনি 'মোটেও তেমন কিছু করেননি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের আবার সবকিছু গুছিয়ে নিতে হয়েছে।'
জবাবে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন যুক্তরাষ্ট্র ছিল 'সবচেয়ে বড় অর্থনীতি'। তিনি বলেন, 'আমরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছি এবং মহামন্দা এড়াতে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করেছি।' ।
বিতর্কে ট্রাম্প দাবি করেন, মুদ্রাস্ফীতির জন্য তার প্রশাসন দায়ী নয় বরং এখন 'মুদ্রাস্ফীতি আমাদের মেরে ফেলছে'।
তবে বিবিসির তথ্য অনুযায়ী আসল চিত্র ভিন্ন। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বাইডেন যখন দায়িত্ব নেন, তখন কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ। তার প্রশাসনের প্রথম দুই বছরে মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, ২০২২ সালের জুনে ৯ দশমিক ১ শতাংশে এ পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধি অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতোই ছিল, মূলত কোভিড মহামারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনের সমস্যার কারণে।
তারপর থেকে, মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি অবিচ্ছিন্নভাবে হ্রাস পেয়েছে, মে মাসে সর্বশেষ ৩ দশমিক ৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনীতির পর আফগানিস্তানে সৈন্য প্রত্যাহার, কোভিড ১৯-এ নেয়া পদক্ষেপ, গর্ভপাত ও স্বাস্থ্যসেবা, ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের বিষয়গুলো ওঠে আসে।
সিএনএনের সঞ্চালক ডানা বাশ ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, তিনি গর্ভপাতের ওষুধ আটকে দেবেন কিনা। সুপ্রিম কোর্ট ওষুধের অধিকারকে বহাল রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, না।
ট্রাম্প জানান, গর্ভপাত বৈধ হওয়া উচিত কিনা এব্যাপারে রাজ্যগুলো সিদ্ধান্ত নিক। তিনি বলেন, 'প্রত্যেক আইনজ্ঞ চেয়েছিলেন যে এটি রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হোক। এখন রাজ্যগুলো তা নিয়ে কাজ করছে।'
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, বিভিন্ন রাজ্যে গর্ভপাতের উপর বিধিনিষেধের জন্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই দায়ী।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টে তিনজন বিচারক নিয়োগ করেন, যাদের সাহায্যে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করা হয়। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প এটার জন্য কৃতিত্ব দাবী করেন।
বাইডেন হুঁশিয়ারি দেন যে, ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট হলে সারা দেশে গর্ভপাতের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়, হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ করতে তিনি কী করবেন? উত্তরে বাইডেন বলেন, 'একমাত্র হামাসই এই যুদ্ধের শেষ চায় না।' তিনি ইসরায়েলের প্রতি তার জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, 'হামাসকে নির্মূল করতে হবে।'
সীমান্ত নীতি নিয়েও বাইডেনকে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন ট্রাম্প। তার দাবি, সীমান্তের ওপার থেকে বন্দি, মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থার লোকজন এবং জঙ্গিরা দেশে ঢুকছে। বাইডেন তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ট্রাম্প যা দাবি করছেন তার সমর্থনে কোনো তথ্য নেই।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বাক্যবিনিময়ের সময় বাইডেন ভ্লাদিমির পুতিনকে 'যুদ্ধাপরাধী' বলে অভিহিত করেন, যিনি পুরোনো সোভিয়েত সাম্রাজ্যের অংশ পুনর্গঠন করতে চান।
বাইডেন বলেন, 'আপনি কি মনে করেন পুতিন ইউক্রেনেই থামতে চান?... পোল্যান্ড, বেলারুশ বা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর কী হবে বলে আপনি মনে করেন?'
বাইডেন আরও উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়, অর্থ দেয় না এবং ন্যাটো ইউক্রেনকে ততটাই সহায়তা দেয় যতটা যুক্তরাষ্ট্র করে। তিনি বলেন, 'এ কারণেই আমরা শক্তিশালী'।
বিতর্ক চলাকালীন বাইডেন এও দাবি করেন যে, তার শাসনামলে কোনো সেনা মারা যায়নি,যেটি সত্য নয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে জর্ডানে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হন।
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রত্যাহারের সময়, ইসলামিক স্টেট গ্রুপের আফগান শাখা আইএস-কে দ্বারা কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল।
এছাড়া, ডিফেন্স ক্যাজুয়ালটি অ্যানালাইসিস সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের শাসনামলে লড়াইয়ে ৬৫ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছেন।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক করউইন স্মিডের মতে, বাইডেন বিতর্কে নিজেকে উপস্থাপন করতে হিমশিম খেয়েছেন। তার বাচনভঙ্গি, কণ্ঠস্বর এবং তিনি যেভাবে যুক্তি সরবরাহ করেন তা বিভ্রান্তিকর। বাইডেন তথ্যভিত্তিক কথা বলতে চাইলেও তা প্রায়শই তার কথার মাঝে হারিয়ে যায়। ট্রাম্পের চরিত্র নিয়ে বাইডেনের কিছু সমালোচনা অবশ্য মানুষের মনে সাড়া ফেলেছে।
এদিকে, ট্রাম্প তার উত্তরে খুব বেশি শক্তিশালী যুক্তি দেখাননি, তবে তিনি তার সমর্থকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন