২০৫০ সালের মধ্যে ৪.৭২ কোটি টন চাল উৎপাদন করা চ্যালেঞ্জিং: বিআইডিএস
ধারাবাহিকভাবে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া, ধান উৎপাদন থেকে অর্থকরী ফসলে স্থানান্তর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব— তাতে করে ২০৫০ সালের মধ্যে ৪.৭২ কোটি টন চাল উৎপাদন সম্ভব নয় বলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে উল্লেখ করেছেন বক্তারা।
রোববার (৩০ জুন) বিআইডিএস আয়োজিত 'লিডিং ইস্যুস ইন অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ'— শীর্ষক সেমিনারে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে মূল বক্তব্য প্রদান করেন বিআইডিএস-এর সিনিয়র ফেলো শাইখ সিরাজ। এ সময় তিনি বাংলাদেশ রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউটের 'রাইস ভিশন বাংলাদেশ: ২০৫০ অ্যান্ড বেয়ন্ড'— শীর্ষক গবেষণার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি তুলে ধরেন— যে গবেষণায় বিআরআরআই বলেছিল, ২০৫০ সালে ৪.৭২ কোটি টন চাল উৎপাদন হবে।
তিনি বলেন, কৃষি জমি কমে যাওয়া, ধান উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে সরে যাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালে ৪.৭২ কোটি টন চাল উৎপাদন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
"তবে আমাদের এখন উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উপকূলীয় ১৫-১৭টি জেলার ৪৪ লাখ হেক্টর জমি— যেটি এক ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে— সেটি দুই-তিন ফসলে নেওয়া দরকার," বলেন তিনি।
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ও কৃষি অর্থনীতিবিদ সাত্তার মন্ডল বলেন, "যেখানে খামারের আয়তন কমে যাচ্ছে, ছোট কৃষকের টিকে থাকাই সংকটের মধ্যে— সেখানে ২০৫০ সালের মধ্যে ৪.৭২ কোটি টন চাল উৎপাদন দুরূহ একটি ব্যপার।"
শাইখ সিরাজ বলেন, "আমাদের ট্রেস টলারেন্ট ভ্যারাইটির ওপর জোর দিতে হবে। আমাদের অনেক ভালো ভ্যারাইটি এসেছে, কিন্তু ২৮, ২৯ এর মতো মেগা ভেরাইটি আনতে পারিনি। কারণ গবেষণার দুর্বলতা রয়েছে। দেখা যায়, ৫ বছর আগে যে ভ্যারাইটি নিয়ে গবেষণা হলো, ৫ বছর পর যখন এটি রিলিজ হচ্ছে– তখন জমির অবস্থা বা প্রেক্ষাপট আর আগের মতো নেই।"
এ সময় বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
তিনি বলেন, "প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ৩ টাকায় কেনা একটি বাঁধাকপি যখন গাড়িতে উঠছে তার দাম হয়ে যাচ্ছে ২২। এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এ কারণে অনেক কৃষিপণ্যের দামই খুচরা বাজারে এসে বেড়ে যাচ্ছে।"
একইসঙ্গে কৃষকের উৎপাদন ব্যবস্থার কমার্শিয়ালাইজেশনের জন্য, খরচ কমানোর জন্য ২৩-২৪ লাখ টাকার বড় মেশিনে ভর্তুকি না দিয়ে ২০-৩০ হাজার টাকার ছোট ছোট মেশিনে ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এ সময় সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, "আমাদের অর্থনীতির ৮২ শতাংশই ইনফরমাল (অনানুষ্ঠানিক)। এর একটি বড় অংশ কৃষি। কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। এটিকে খাদ্য নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে একটি নির্দিষ্ট ফরমেটে (কাঠামো) ধরে রাখা উচিত নয়। একে ছেড়ে দিতে হবে। এর ধরণটা কি হবে, তা কৃষকরাই ঠিক করবে।"
তিনি বলেন, "খাদ্য নিরাপত্তার জন্য উৎপাদন করতেই হবে, এটা ঠিক না; সম্পদ হাতে থাকলে খাদ্য কেনা যাবে।"
বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, "সড়কে চাঁদাবাজি, পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেটের বিষয়গুলো দেখতে হবে। এসব দেখার দায়িত্ব সরকারের। তবে বাজারের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া উচিত না। সরকার শুধু বাজার ব্যবস্থাপনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।"
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।