'প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম': বিতর্কে খারাপ পারফরম্যান্সে বাইডেন দুষলেন বিমান ভ্রমণের ক্লান্তিকে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে খুব একটা সুবিধে করতে পারেনি জো বাইডেন। এবার নিজের এমন খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য বিমান ভ্রমণের ক্লান্তিকে দুষলেন বর্তমান এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খবর বিবিসির।
বাইডেন জানান, বিতর্কের আগে নানা প্রান্তে ভ্রমণ করে বুদ্ধিমানের পরিচয় দেননি তিনি। আর এর ফলেই বিতর্কে খেই হারিয়েছেন ৮১ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ।
বাইডেন বলেন, "আমি আমার স্টাফদের কথা শুনিনি। ফলে স্টেজে আমি প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।"
এদিকে বিতর্কের পর নভেম্বর মাসে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাইডেনের দল ডেমোক্রেটদের মধ্যে বেশ অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। অনেকেই আবার বর্তমান প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে আসতে বলেছেন। কেউ কেউ তার শীর্ষ উপদেষ্টাদের পদত্যাগেরও দাবি জানান।
এদিকে গত মাসে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুইবার ইউরোপ সফর করেছিলেন বাইডেন। সেক্ষেত্রে ১৫ জুন তিনি ইতালি ভ্রমণের পরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথে একটি তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। পরের দিন তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরে আসেন।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন যে, বিতর্কের দিন ঠান্ডায় আক্রান্ত ছিলেন বাইডেন। তবে গতকাল (মঙ্গলবার) মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার মন্তব্যে কোনও অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেননি। এমনকি হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র আগের দিনও এমন কোনো তথ্য জানায়নি।
এদিকে বাইডেন বিতর্কের প্রস্তুতির জন্য ক্যাম্প ডেভিডে ছয় দিন কাটিয়েছিলেন। সেখানে নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রেসিডেন্টের শিডিউল সম্পর্কে অবগত এমন একজনের নাম প্রকাশ না করে সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) জানায়, প্রতিদিন সকাল ১১টায় কাজ শুরু হয়েছিল। এক্ষেত্রে বাইডেনকে ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছিল।
নিউ ইয়র্ক টাইমস আরও জানায়, ক্রমাগত ভ্রমণের ফলে বাইডেন বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এক্ষেত্রে তার বিতর্কের প্রস্তুতি দুইদিন কমিয়ে এনে তাকে দেলাওয়ারে সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন বাড়িতে বিশ্রামের জন্য রাখা হয়েছিল।
বাইডেনের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু বেটস অবশ্য বলেছেন, "ক্যাম্প ডেভিডে থাকাকালীন প্রেসিডেন্ট সকালে উঠে নিজের প্রতিদিনের অনুশীলন করেছেন। এরপর ১১টার আগেই বিতর্কের কাজ 'ভালোভাবে' শুরু করেছিলেন।
এদিকে ডেমোক্রেটের কংগ্রেসম্যান জেমি রাসকিন চলতি সপ্তাহে এমএসএনবিসিকে জানান, বিতর্কটি বেশ কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তিনি স্বীকার করেন যে, ডেমোক্রেটদের মাঝে এটি নিয়ে বেশ গুরুতর আলোচনা হচ্ছে।
জেমি রাসকিন বলেন, "প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমাদের দল তাতে সংঘবদ্ধ থাকবে। এক্ষেত্রে প্রচারণার একদম কেন্দ্রে তাকে প্রয়োজন।"
ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির নিয়ম অনুযায়ী, দলের অন্য নেতারা বাইডেনকে প্রার্থীতা থেকে বাদ দিতে পারে এমন কোনো নিয়ম নেই। তারা কাউকে বাইডেনের স্থলাভিষিক্ত করতে হলে তা কনভেনশন ফ্লোরে মনোনয়ন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করার মাধ্যমে করতে হবে।
এ প্রক্রিয়াটি হলো: প্রথমে বাইডেনকে নিজে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে হবে। এরপর তার জায়গায় অন্য কাউকে বাছাইয়ে একটি উন্মুক্ত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
এবারের 'প্রাইমারি'তে প্রায় চার হাজার ডেলিগেটের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন বাইডেন। তবে সেসময় যারা বাইডেনকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেও এই বিতর্কের পর নড়েচড়ে বসেছেন।
এক্ষেত্রে তারা যদি বাইডেনকে মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ দিতে চায়, তাহলে কমপক্ষে তাদের অর্ধেককে নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে হবে এবং তাকে (বাইডেন) প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
ডেমোক্র্যাটরা চাইলে এই আগস্টে শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে নতুন প্রার্থী বেছে নিতে পারে। তবে বাইডেনের সরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। বর্তমানে তিনিই একমাত্র ডেমোক্র্যাট যিনি ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন এবং তাকে প্রতিস্থাপন করা দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি হতে পারে।
কিন্তু বাইডেন যদি সত্যিই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন, তাহলে তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে সবার প্রথমে আছে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে হোয়াইট হাউসের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডেভিড অ্যাক্সেলরড ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের ৯০ মিনিটের বিতর্কের পরপরই তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
অ্যাক্সেলরড সিএনএনকে বলেন, 'তিনি যেভাবে বিতর্ক শুরু করলেন তাতে হতবাকই হয়েছি। তার নির্বাচন চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে কিনা তা নিয়ে এখন আলোচনা হবে'।
প্রার্থীদের প্রথম বিতর্কের আগে থেকেই অনেক মার্কিনি বাইডেনের বয়স ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এই ঘটনার পর যা আরও গভীর হয়েছে।
এদিকে গত ৩০ জুন প্রকাশিত সিবিএস নিউজ/ইউগভ জরিপে দেখা গেছে, ৭২ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার বিশ্বাস করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য বাইডেন মানসিকভাবে দৃঢ় নন। এর আগের একটি জরিপেই ৬৫ শতাংশ ভোটার এমন আশঙ্কা করেছিলেন। জরিপে ৪৯ শতাংশ ভোটার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়েও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
জরিপ অনুযায়ী, ৪৫ শতাংশ নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাট ভোটার মনে করেন যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে অন্য প্রার্থীকে সুযোগ করে দেয়া উচিত।
বিতর্কের আগে ৮১ বছর বয়সি বাইডেন এবং ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প এর প্রার্থীতা নিয়ে অনেক ভোটারের মধ্যেই শঙ্কা থাকলেও বিতর্কের পর বাইডেনকে নিয়ে তাদের শঙ্কা আরো বেড়েছে।
বিতর্কের পরে ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামা স্বীকার করেছেন, বাইডেন বিতর্কে তার সেরাটা দিতে পারেননি। তবে তারা এবং আরো অনেক ডেমোক্র্যাট মিত্র বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়েছেন।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস বলেছেন, বিতর্কটি বাইডেনের জন্য একটি বড় ধাক্কা হলেও এটি তাকে (বাইডেন) একটি প্রত্যাবর্তনের সুযোগ করে দিতে পারে।
সিবিএস নিউজ/ইউগভ জরিপ বাইডেনের মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ দেখা গেলেও তার প্রচারাভিযানের চেয়ারম্যান জেন ও'ম্যালি বাইডেনের পক্ষেই কথা বলেছেন। তিনি যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, জরিপগুলো থেকে দেখা যায় বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বাইডেনকে নিয়ে চিন্তিত, মার্কিন নাগরিকরা নয়।
তবে বিতর্কের পরে ভোটারদের সাক্ষাৎকার থেকে পাওয়া তথ্য সিবিএস নিউজের জরিপে ভোটারদের দেখানো উদ্বেগকে সমর্থন করে। একজন ডেমোক্র্যাটিক ভোটার বিবিসিকে বলেন, তারা আগের থেকে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বাইডেনের ক্ষমতার প্রতি কম আত্মবিশ্বাসী।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান