যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হলেন র্যাচেল রিভস
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর অফ দ্য এক্সচেকার) হয়েছেন র্যাচেল রিভস। এক্ষেত্রে নবনির্বাচিত দল লেবার পার্টির পক্ষ থেকে তার ওপর দেশটির অর্থনৈতিক ও ফাইনান্সিয়াল ক্ষেত্রে বিদ্যমান পলিসিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটেনে চ্যান্সেলর অফ দ্য এক্সচেকারের পদটি গত ৮০০ বছর ধরে থাকলেও এতদিন সেখানে দেখা যায়নি কোনো নারীকে। দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও যেন এমনটাই দেখা যায়। কেননা ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর কিংবা ট্রেজারি বিভাগের ফাস্ট পার্মানেন্ট সেক্রেটারির পদের দায়িত্বও এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে দেওয়া হয়নি।
সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর প্রত্যয় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি। সেক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান কাজে লাগিয়ে লক্ষ্য অর্জনে রিভস কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে দলটির প্রত্যাশা। একইসাথে আশা করা হচ্ছে যে, কর্মক্ষেত্রে নারীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা পরিবর্তন আনতে পারবেন তিনি।
রিভস মনে করেন, দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে দায়িত্ববোধের জায়গাটিও গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে অন্যান্য নারীদের স্বপ্নপূরণে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চান তিনি।
রিভস নারী ও পুরুষের মধ্যকার বিদ্যমান বেতন বৈষম্য দূর করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেক্ষেত্রে বর্তমানে তিনি দেশটির কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান ১৪.৩ শতাংশ জেন্ডার পে গ্যাপের সমস্যাটি সমাধান করতে চান।
ক্যাম্পেইন চলাকালে রিভস জানান, লেবার পার্টির খ্যাতিমান নারী ব্যক্তিত্ব বারবারা ক্যাসেল, হ্যারিয়েট হারম্যান, এলেন উইকিনসনদের জীবনী থেকে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। যার ফলেই তিনি নারী ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর সমান বেতন কাঠামো ও সমানাধিকারের জন্য লড়াইয়ের সংকল্প করেছেন।
২০২৩ সালে রিভসের প্রকাশিত 'দ্য উইমেন হু মেড মর্ডার্ন ইকোনোমিক্স' বইয়ে এই সংক্রান্ত কিছু ধারণা পাওয়া যায়। যেখানে তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসের মিশেলে নারী অর্থনীতিবিদদের জীবনী ও অবদানকে তুলে ধরেন।
বইটিতে রিভস ব্রিটিশ পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার মান ও ভবিষ্যতকে উন্নত করতে পরিবর্তনের আহ্বান করেন। একইসাথে সেখানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিনিধিত্বে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বিদ্যমান লিঙ্গ বৈষম্যকে সামনে নিয়ে আসেন।
২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে জোট ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার হিসেবে ক্ষমতায় ছিল কনজারভেটিভ পার্টি। এই সময়ে অর্থনৈতিক পলিসি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা, সরকারি পরিষেবায় ব্যর্থতা, ব্রেক্সিট, কোভিড, আন্তর্জাতিক সংঘাত, মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টির শাসনামলে তিনটি নির্বাচন (২০১৫, ২০১৭ ও ২০১৯ সাল) ও পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিলেও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন আসেনি।
এক্ষেত্রে ২০১০ সাল থেকে নারীরা কঠোর অর্থনৈতিক নীতির অন্যতম ভুক্তভোগী হয়েছে। এছাড়াও কোভিড মহামারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক নেতিবাচক প্রভাবে সেই চ্যালেঞ্জগুলি আরও বহুগুণে বেড়েছে।
এক্ষেত্রে রিভস যদি সত্যিকার অর্থেই পলিসিগুলোকে নারীবান্ধব করতে পারেন; তবে ব্রিটেনের এই অর্ধেক জনশক্তিকে বেশ কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যাবে। যাতে করে বাড়বে দেশটির উৎপাদনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান