পিঁপড়ারাও ‘সার্জারি’ করে, গুরুতর আহত সঙ্গীর অঙ্গচ্ছেদ করে জীবন বাঁচায়: গবেষণা
পিঁপড়া নিজেদের সঙ্গীদের বাঁচাতে যত্ন নিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রয়োজনে আহত সঙ্গীদের অঙ্গচ্ছেদও করতে পারে পিঁপড়া। মানুষের বাইরে প্রথম কোনো প্রাণী হিসেবে পিঁপড়া এমনটি করতে পারে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। আহত পিঁপড়া পায়ের আঘাত ও সংক্রমণ সাড়াতেই অঙ্গচ্ছেদ করা হয়।
আশ্চর্যজনকভাবে পিঁপড়ারা আঘাতের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে এমন চিকিৎসা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গবেষণার প্রধান লেখক ও লুসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এরিক ফ্রাঙ্ক বলেছেন, 'পিঁপড়ারা কিছুটা ক্ষত নির্ণয় করতে পারে এবং আহতদের বেঁচে থাকার জন্য তাদের চিকিৎসা করতে পারে।'
কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে ফ্র্যাঙ্ক এবং সহকর্মীরা বর্ণনা করেছেন, কীভাবে ফ্লোরিডা কার্পেন্টার পিঁপড়া (ক্যাম্পোনোটাস ফ্লোরিডানাস) আহত সঙ্গীর ডানপাশের পশ্চাৎ অঙ্গে কেটে ফেলতে পারে এবং পরবর্তী এক সপ্তাহ আহত পিঁপড়ার প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, ফিমার বা উরুতে আঘাত পাওয়া ১৭টি পিঁপড়ার মধ্যে ১৩টি পিঁপড়ার অঙ্গচ্ছেদ করেছে সঙ্গীরা। পিপড়াগুলোর ট্রোচান্টার (নিতম্বের সাথে পায়ের হাড়ের জয়েন্ট) থেকে অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছিল।
গবেষণায় বলা হয়, 'সঙ্গীরা প্রথমে আহত পিঁপড়ার ক্ষতটি চাটতে শুরু করে। তারপর ট্রোচান্টা কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত তাদের মুখের অংশ দিয়ে আহত অঙ্গটি উপরে নিয়ে যায়। তারপরে তারা বারবার আহত পায়ে কামড় দিতে থাকে যতক্ষণ না এটি কেটে যায়।'
নীচের পায়ে আঘাত পাওয়া নয়টি পিঁপড়ার জন্য কোনও অঙ্গচ্ছেদ করা হয়নি। তার পরিবর্তে আহত পিঁপড়াগুলোর সঙ্গীরা তাদের ক্ষত চেটে দিয়েছিল যত্ন করার জন্য। সংক্রামিত ক্ষতযুক্ত পিঁপড়ার সাথে পরীক্ষাটি পুনরাবৃত্তি করার পর গবেষকরা অনুরূপ ফলাফল পেয়েছিল।
গবেষণায় আরেকটি পরীক্ষা থেকে দেখা যায়, সংক্রামিত ক্ষত থাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পিঁপড়াদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা পরিষ্কার ক্ষতের পিঁপড়ার তুলনায় বেশি। আহত পিঁপড়া নিজের বাসায় ফিরে আসতে পারলে ও সঙ্গীরা ঠিকভাবে যত্ন ও অঙ্গচ্ছেদ করতে পারলে সেটি বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, সাধারণত উরুতে ক্ষত থাকা পিঁপড়ার তুলনায় নিচের দিকের পায়ের ক্ষত থাকা পিঁপড়ার অঙ্গচ্ছেদ খুব একটি লাভজনক হয় না। উরুর ক্ষত, নীচের পায়ের ক্ষতের বিপরীতে এমন শারীরিক কাঠামোর সাথে যুক্ত ছিল যা পিঁপড়ার শরীর জুড়ে রক্তের মতো তরল পাম্প করে। নীচের পায়ে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে তা কেটে ফেলার পর পিঁপড়ার শারীরিক অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয় না।
ড. এরিক ফ্রাঙ্ক বলেছেন, পিঁপড়া প্রায়ই আঞ্চলিক বিরোধের সময় আহত হয়। তবে আহতদের চিকিৎসা দিলে পিঁপড়ার কলোনির (পিঁপড়ার বাসা) উপকার হয়। তিনি বলেন, 'শিকার করতে যাওয়া বা খাদ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া প্রায় ১০ থেকে ১১ শতাংশ পিঁপড়া আগের দিনের ক্ষত বয়ে বেড়ায়। তাই সেগুলো তখনও কলোনির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ থাকে।'
গবেষণায় জড়িত না থাকা সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফ্রান্সিস র্যাটনিক্স গবেষণার ফলাফল দেখে বিস্মিত হননি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'সামাজিক পোকামাকড় প্রায়ই একে অপরকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করে, যেমন মৌমাছিরা সঙ্গীদের খাবারের দিকে নির্দেশ করে। আর পিঁপড়াতো কলোনি রক্ষা করতে গিয়ে আহত হওয়া সঙ্গীর অঙ্গই কেটে ফেলে।'
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়