বরিশালের আটঘরে তৈরি কাঠের নৌকা যাচ্ছে জার্মানিতে, তবে পানিতে চলার জন্য না
নৌকার জন্য বিখ্যাত আটঘরে তৈরি কাঠের নৌকা এবার জার্মান বাসিন্দারা কিনে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের আগস্টে নৌকা হস্তান্তর করা হবে। প্রথম চালানে ১০টি নৌকা যাচ্ছে।
নেছারাবাদ ট্যুর অপারেটরস এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর বাজারসংলগ্ন নৌকার মিস্ত্রি আজিজুল হক নৌকা তৈরির অর্ডার পেয়েছেন। ইতিমধ্যে দুটি নৌকা তৈরিও করেছেন। বাকিগুলোর কাজ চলছে।
রাকিব হোসেন বলেন, 'দুই মাস আগে জার্মানির এক নাগরিক এসেছিলেন আমাদের এলাকা ঘুরে দেখতে। তিনি নৌকা দেখে পছন্দ করেন এবং আজিজুল হকের কাছ থেকে তৈরি করে জার্মানিতে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।'
নৌকার কারিগর আজিজুল হক টিবিএসকে বলেন, 'আমি ত্রিশ বছর ধরে নৌকা তৈরি করি। সাধারণত ডিঙ্গি ও টালাই বানাতাম। কয়েকদিন আগে জার্মানির এক লোক এসে ১০টি নৌকা তৈরি করার জন্য অর্ডার দেন। এটিই আমার প্রথম বিদেশি অর্ডার। এর আগে আমাদের এলাকায় নৌকা তৈরির বিদেশি অর্ডার কেউ পায়নি। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে ১০ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছে। তিনি অগ্রিম টাকাও দিয়ে গেছেন। মেহগনি গাছ দিয়ে তাদের দেখানো ডিজাইন অনুসারে তৈরি করছি।'
প্রথম দফায় ১০টি নৌকা যাবে। এরপরে আরও ২০টি নৌকা বানাতে হবে, তবে তা ভিন্ন ডিজাইনের। ওই জার্মান নাগরিকের সঙ্গে আসা বরিশালের এক বাসিন্দা সপ্তাহে একবার এসে কাজের অগ্রগতি দেখে যান বলে জানান তিনি।
আজিজুল বলেন, 'তিনি (জার্মান নাগরিক) যা বুঝিয়েছেন, এই নৌকা নিয়ে সেখানকার বাজার দেখবেন। বাজারে চললে আরো নৌকা তৈরি করে নেবেন। তবে নৌকাগুলো ওখানকার কোনো নদী বা খালে চলবে না। এসব দিয়ে বসার জন্য শৌখিন আসন বানাবেন।'
আটঘর বাজারের ব্যবসায়ী শফিক মোল্লা বলেন, 'জার্মানির ওই পর্যটক যেদিন এসেছিলেন, আমরা সবাই-ই ছিলাম। তিনি নৌকা দেখে পছন্দ করেছেন এবং তার ডিজাইন দেখিয়ে গেছেন। সে অনুসারে আমাদের বাজারের মিস্ত্রি আজিজুল হক কাজ করছেন। কয়েকটি তৈরিও করেছেন। বাকি যেগুলো আছে, সেগুলো তৈরির কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন।'
জার্মান নাগরিকের পক্ষে নৌকা তৈরির কাজ তদারকি করা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'এখন কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে। এজন্য আমরা বিস্তারিত জানাতে চাইছি না। তবে সবগুলো নৌকা পুরোপুরি তৈরি হলে হস্তান্তরের আগে বিস্তারিত জানাব।'
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, 'নেছারাবাদ উপজেলার আটঘরের নৌকার হাট খুব বিখ্যাত। সেখান থেকে জার্মানিতে নৌকা যাচ্ছে সংবাদটি অত্যান্ত আনন্দের। এতে করে বাংলাদেশের পণ্যের বিশ্ববাজার যেমন তৈরি হবে, তেমনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।'
নৌকার কারিগর আজিজুলের যেকোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা সাহায্য করা হবে বলেও জানান মনিরুজ্জামান।
উল্লেখ্য, পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার আটঘর নৌকার হাট দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাট। এই অঞ্চলের পেয়ারা, লেবু ও আমড়ার বাগান তদারকির জন্য ছোট ছোট নৌকার খুব চাহিদা। এছাড়া জালের মতো খাল থাকায় এ অঞ্চলে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এখনও নৌকা। প্রতি মৌসুমে এই হাটে ৩০ কোটি টাকারও বেশি নৌকা বিক্রি হয।