ঢাকাসহ সারা দেশে বিঘ্নিত হচ্ছে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই গত ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মোবাইল ডাটা সার্ভিস ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়ছেন ব্যবহারকারীরা। ফলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপগুলো ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছেন না তারা।
মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ধানমন্ডি, নীলক্ষেত, পলাশী, সায়েন্সল্যাব, গ্রিন রোড, যাত্রাবাড়ী ও সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক এলাকাগুলো।
সকাল থেকে গ্রাহকরা দেশের কোথাও ফোরজি মোবাইল সেবা ব্যবহার করতে পারছেন না বলে খবর আসছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী তাজ ইসলাম বলেন, 'আমি সাধারণত অফিসে যাওয়ার সময় মেইল চেক বা মিউজিক স্ট্রিম করি। কিন্তু আজ আমি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারিনি।'
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'নেটওয়ার্ক বার-এ থ্রিজি দেখালেও ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। হার্ডওয়্যার সমস্যা হয়েছে কি না দেখার জন্য ফোন রিস্টার্টও দিয়েছি, কিন্তু মোহাম্মদপুর থেকে মগবাজার পর্যন্ত কোনো ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না।'
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) মধ্যরাতের পর থেকে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ার খবর প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ার খবর আরও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
মোবাইল ডাটা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে আজ (১৮ জুলাই) ভোর থেকে রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকা, যেমন নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী ও গাজীপুরের ব্যবহারকারীরা ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন। পাবনা, খুলনা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও রাঙ্গামাটির সূত্রগুলোও নিশ্চিত করেছে যে গতকাল রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন ঘটেছে, ফোরজি সেবা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
এর আগে গত দুই দিন ধরে মূলত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে মোবাইল ডাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
একটি শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটর কোম্পানির একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, 'ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এই বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, মোবাইল অপারেটরগুলো নয়।'
টেলিকম অপারেটরদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো জানিয়েছে, গতকাল রাতে এনটিএমসি নিজের হাতে সব অপারেটরের মোবাইল ফোরজি সেবা বন্ধ করেছে। বর্তমানে দেশের কোথাও মোবাইলে ফোরজি সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
নাম না প্রকাশের শর্তে একটি টেলিকম অপারেটর প্রতিনিধি বলেন, 'আমাদের সিস্টেমে সরাসরি অ্যাকসেস আছে এনটিএমসি-র। মনিটরিং সংস্থাটি নিজেই দেশব্যাপী টুজি নেটওয়ার্ক স্যুইচ করেছে। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত সাধারণত আমাদের কী করতে হবে-না-হবে, সেই নির্দেশনা দিয়ে আসছিল তারা।'
একদিকে এনটিএমসি এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। অন্যদিকে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক সার্ভিস অপারেটর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
মন্তব্যের জন্য এনটিএমসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
বিটিআরসি সচিব নূর-ই-খাজা আলামীন টিবিএসকে বলেন, 'কোনো বিবৃতি দেওয়ার আগে আমরা এখন বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি।'
পর্যাপ্ত ডাটা থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল ও টেলিটকের ব্যবহারকারীরা মোবাইল ডাটার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
তবে অধিকাংশ ব্রডব্যান্ড সার্ভিস এখনও পর্যন্ত বিঘ্নিত হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েক জায়গায় শুধু ব্রডব্যান্ড ব্যবহার বিঘ্নিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, ফাইবার অপটিক কাটা পড়ার কারণে ওইসব জায়গায় ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়েছিল
এদিকে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ও মোবাইল অপারেটররা এখনও এ সমস্যার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তা বলেন, তাদের দিক থেকে কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যা নেই, তবে গ্রাহকপর্যায়ে ইন্টারনেটের গতি কমানোর উপায় রয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে যখন প্রাণঘাতী শিক্ষার্থী বিক্ষোভ হচ্ছে, সেই সময়ই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে এমন বিঘ্ন ঘটছে।
আজ (১৮ জুলাই) সারা দেশে 'কমপ্লিট শাটডাউন'-এর ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম।