জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল সরকার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ দলটির বিভিন্ন শাখার সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাংগীর আলমের স্বাক্ষরিত একটি গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
'সরকার সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮(১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সকল অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল,' বলা হয় প্রজ্ঞাপনে।
এ গেজেট প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে।'
একই সুরে কথা বলেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকও। নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত-শিবিরকে মোকাবিলার প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে বলে এদিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন তিনি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনও সরকার সংশোধনের ব্যবস্থা করেছে। 'নিষিদ্ধ করার পরেও শাস্তি দেওয়া যাবে না এমনটি নয়। হয়তো নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আর সাজার মধ্যে আসবে না,' বলেন তিনি।
নিষিদ্ধ করার পর জামায়াতে ইসলামীর সম্পদের কী হবে — প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, 'সেগুলোরও ব্যবস্থা হবে। সেটা আইনে আছে।'
দলের যারা সদস্য তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এ দলের অধীনে তারা রাজনীতি করতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশের কোনো আইনে অপরাধ করলে তাদের সেটার বিচার হবে।
এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।
ওইদিন বৈঠকশেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস ও জঙ্গি হামলার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে জোট সম্মত হয়েছে।'
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাকে জঙ্গি তৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত করে হামলার জন্য জামায়াত-শিবির ও বিএনপিকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের ঘটনাগুলো রাজনৈতিক নয়, জঙ্গি কর্মকাণ্ড।'
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল (৩১ জুলাই) বলেছেন, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে এবং যে কোনো সময় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালের সংবিধান ধর্মের ভিত্তিতে কোনো সংগঠন, ইউনিয়ন বা রাজনৈতিক দলের গঠন ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সক্রিয় বিরোধিতা করেছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। বাহাত্তর সালে ধর্মীয় দলগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে জামায়াতের উপস্থিতি বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর সামরিক আইন জারি করেন। এর ধারাবাহিকতায় ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো গঠন ও কাজ করার পুনরায় অনুমতি পায়।
তবে জিয়াউর রহমান বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-এ কোনো পরিবর্তন আনেনি। এরপর জামায়াত ক্রমশ বড় হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে দেশের বৃহত্তম ইসলামি দল হিসেবে তার অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জামায়াত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০টি আসন পায়। ১৯৯১ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ১৮-তে উন্নীত হয়।
২০০১ সালের নির্বচানের সময় বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের অংশ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জামায়াতে ইসলামী।
সেবার ১৭ আসনে জয়লাভ করে দলটি। পরবর্তী নির্বানে আওয়ামী লীগের কাছে হারে চারদলীয় জোট।
২০১৪ সালে জামায়াতের অন্যতম নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ আরও দুই নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট দলটির নিবন্ধন বাতিল করেন।
২০১৯ সালে ভারতে জামায়াত-ই-ইসলামী (জেএন্ডকে) নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। রাশিয়ায় দলটি ২০০৩ সাল থেকে নিষিদ্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞার পর রাজনৈতিক আলোচনায় জামায়াতের বিশেষ উপস্থিতি ছিল না। এটি মূলত আলোচনায় থেকেছিল অগ্নিসংযোগ ও কুপিয়ে হত্যার মতো সহিংস অপরাধের জন্য।